সময় যত এগুচ্ছে তত জটিলতা বাড়ছে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে। কিছু দিন আগেই খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার ইস্যু দাঁড় করিয়ে ভারত আইসিসিকে জানিয়েছে যে, তারা খেলতে যাবে না পাকিস্তানে। যা নিয়ে আয়োজকরা চটেছে। এবার এ বিষয়ে পিসিবি শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, শুধু তাই নয়, পরিকল্পনাও করছে ভারতে ছাড়াই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার।
শোনা যাচ্ছে, আইসিসিকে জানানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে পিসিবি। তাতে দিনে দিনে দীর্ঘদিন পর আয়োজিত হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ ঘোলাটে হচ্ছে। আট দল নিয়ে তিন ভেন্যুতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে বসবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নবম আসর। ইতিমধ্যে আয়োজকরা ‘মিনি বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই টুর্নামেন্টটি আয়োজনের শেষ সময়ের প্রস্তুতিও প্রায় সেরে ফেলেছে। কিন্তু হঠাৎ খেলতে না যাওয়ার কথা জানিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ভারত।
যদিও বিষয়টি নতুন কিছু নয়, এমনটি আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। কেননা সবশেষ এশিয়া কাপেরও আয়োজক ছিল পাকিস্তান সেবারও খেলতে যায়নি রোহিত-বিরাটরা, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় আয়োজন করা হয়েছিল টুর্নামেন্ট। তাই এবারও ধারণা করা হচ্ছিল এমন কিছুই হবে। তবে পাকিস্তান এবার ধৈর্য হারিয়ে হাঁটছে ভিন্ন পথে, এবার আর হাইব্রিড মডেল নয়, ভারতকে বাদ দিয়ে দেওয়ার কথাই ভাবছে। দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে এমনটি সামনে এসেছে।
পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সূত্রে মতে, পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিসিবি। তারপর আগামী দুই দিনের মধ্যে আইসিসিকে চিঠি দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাইবে তারা। শোনা যাচ্ছে, পিসিবি ইতিমধ্যে আইনি পরামর্শ ও আইসিসিকে প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে কেন পাকিস্তানে আসবে না তারা। আর এর ব্যাখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবেই চায় আয়োজকরা। যদি কোনো সদুত্তর না দিতে পারে তাহলে ভারতকে ছাড়াই টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে তারা, তবুও এবার আর হাইব্রিড মডেলে যাবে না তারা।
আর যদি হাইব্রিড মডেলে শেষ অবদি যেতেই হয় তাহলে আয়োজক থেকে সরে দাঁড়াবে পাকিস্তান। এদিকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দুই বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ছাড়াও যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব সেই বিষয়ে শক্তিশালী উদাহরণও হাতে রেখেছে পিসিবি। উদাহরণস্বরূপ তারা দুটি বিশ্বকাপকে সামনে আনতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সেগুলো হলো ১৯৯৬ এবং ২০০৩ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিরাপত্তাজনিত কারণে শ্রীলঙ্কায় না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তবুও আইসিসি আয়োজক দেশ পরিবর্তনের পরিবর্তে তাদের প্রতিপক্ষকে পয়েন্ট প্রদান করে।
একইভাবে, ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড যথাক্রমে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐবারও একই ভাবে ম্যাচের পয়েন্ট প্রতিপক্ষকে দিয়ে দেয় আইসিসি। এই উদাহরণগুলোই আইসিসির সামনে দাঁড় করাবে এবার পিসিবি যাতে ভারতকে বাদ দিয়েও টুর্নামেন্ট আয়োজনে আইসিসি কোনো প্রশ্ন দাঁড় না করাতে পারে পিসিবির সামনে।
এখানেই শেষ নয়, শেষ পর্যন্ত যদি ভারত এলেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে না যায় তাহলে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যে কোনো মঞ্চে ক্রিকেট ম্যাচ না খেলার অবস্থান নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান। এ নিয়ে দেশটির সরকারের অবস্থান বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের একজন পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলে, ‘কোনো টুর্নামেন্টেই আমরা ভারতের সঙ্গে খেলব না, যতক্ষণ না ওরা পাকিস্তানে এসে খেলতে চাইবে।’
যদিও ভারতকে বাদ দিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে ব্যাপক লসের মুখে পড়তে হতে পারে পাকিস্তানকে। কেননা সম্প্রচার স্বত্বসহ আইসিসির আয়ের বড় অংশই আসে ভারতের বাজার থেকে। তবে পিসিবির মতে ভারতের সঙ্গে ম্যাচ বয়কট করলে ক্ষতি শুধু পাকিস্তানেরই হবে না, ভারতেরও হবে। যে কোনো টুর্নামেন্টে উত্তেজনার পারদ বাড়াতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচই মুখ্য ভূমিকা রাখে। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তে বারবার অনড় থাকবে আর পিসিবি বারবার নরম হয়ে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তা হতে পারে না। এর আগে সবশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ঐ আসরের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলস। ফাইনাল খেলেছিল ভারত-পাকিস্তান। যেখানে দুই বারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে নিজেদের প্রথম শিরোপা জেতে পাকিস্তান।
সূত্র: ইত্তেফাক