চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগর টগর, যিনি ৬০০ টাকার কর্মচারী থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিভাবে এই উত্থান কিভাবে সম্ভব হল এত টাকার মালিক হওয়া।তাহলে একটু পিছনে যেতেই হবে, এমপি হওয়ার পূর্বে আলী আজগর টগর ইসলাম গ্রুপে ৬০০ টাকা বেতনের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।
পারিবারিক ভাবে জামায়াতে ইসলাম বা মুসলিম লীগ পরিবারের সন্তান তিনি। তার পিতার নাম আব্দুল ওহাব ওস্তাগার। চাচার নাম ফকির ডাক্তার, যে ফকির ডাক্তার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বিশাল ভূমিকা রাখেন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ইসলাম গ্রুপের চাকুরী করা কালীন সময়ে হাতিয়ে নেন বেশ কিছু টাকা। তারপর ইচ্ছা জাগে রাজনীতি করার। তখন ওই আসনের দুজন বর্ষিয়ান নেতা রাজনীতি করতেন একজন মির্জা সুলতান রাজা ও আরেকজন মোজাম্মেল হক যিনি মোজাম্মেল কন্টাকটার নামে পরিচিত অথবা বঙ্গজ বিস্কুটের মালিক ছিলেন তিনি। সুলতান রাজা ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা, স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশিষ্ঠ সংগঠক। আলী আজগর টগরের কুট কৌশলে এবং স্থানীয় এক লোভী নেতার সহায়তায় আওয়ামী লীগের জেলার শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক পদটির লাভ করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ এই কুকর্মটি করেছেন। আজাদুল ইসলাম আজাদ সে সময়ে আলী আজগর টগরের কাছে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে পদটি বিক্রি করেছিলেন। তারপর একে একে মির্জা সুলতান রাজা কে, আজাদুল ইসলাম আজাদকে পিছনে ফেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক প্রভাবশালী নেতার সহায়তায় তিনি চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের নমিনেশন বাগিয়ে নেন।
তারপর শুরু হয় তার আসল খেলা। একের পর এক সমস্ত জাতীয় পত্রিকায় কাহিনী ছাপা হতে থাকে আলি আজগর টগরকে নিয়ে ।
২৯/০২/২০০৯ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় পৃষ্ঠা নাম্বার এক কলম নাম্বার তিন শিরোনাম করে আলী আজগর টগর ও তার দুই ভাইয়ের রাজত্বে দুই উপজেলার মানুষ অতিষ্ঠ। এক ভাইয়ের নাম আলী মনসুর বাবু তাকে মনসুর বাবু বলে ডাকে না তাকে বলতে হয় গোল্ডেন বাবু। কারণ তিনি গোল্ড চোরাকারবারীর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আরেক ভাই আরিফ সে জীবননগর কন্ট্রোল করেন। এদের মূল ব্যবসা সোনা যাবে ইন্ডিয়ায় আসবে ফেনসিডিল। এই ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা টগর পরিবার রোজগার করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আলী আজগার টগর তার ভাই বাবুকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছেন, ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে। জীবননগর ও দামুড়দা উপজেলার যতগুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছে প্রত্যেকে আলী আজগর টগরের নিজস্ব লোক বলে খ্যাত। কারণ এদের মাধ্যমেই আলী আজগার টগর ও তার ভাই বাবু ওরফে গোল্ডেন বাবু ও আরিফ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ব্যবসা একটাই যাবে সোনা আসবে ফেনসিডিল।এদের সহযোগী নফর আলী দর্শনা পৌর কাউন্সিলর,সৌরভ হোসেন খাঁন ওরফে (সৌরদ্দী) চেয়ারম্যান, আব্দুল হান্নান চেয়ারম্যান, দামুরহুদার হযরত আলী চেয়ারম্যান, মুক্তার আলী চেয়ারম্যান আরো অনেকে। ঢাকা থেকে ক্রসফায়ারের তালিকা হয় সেই তালিকায় দুই ভাই তালিকাভুক্ত হয়ে পালিয়ে যায় ইন্ডিয়াতে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ক্রসফায়ার থেকে নাম বাদ দেয়।
আলী আজগর টগর এমপি এমন কোন অপরাধ নেই যা তিনি করেন নাই। হাট বাণিজ্য, ঘাট বাণিজ্য, রাস্তা বাণিজ্য, খাল বাণিজ্য, সবকিছু নায়ক আলী আজগর টগর।
আলী আজগর টগরের মূল ব্যবসা হলো সোনা পাচার বিনিময়ে ফেন্সিডিল আমদানি। এত অপকর্ম করেও বারবার নমিনেশন পেয়েছে শেখ পরিবারের আশীর্বাদ এবং বিপুল অর্থের বিনিময়ে।
শুধু চোরাকারবারী, চাঁদাবাজি করেই সে ক্ষান্ত হয় নাই। জীবন নগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে সৌর বিদ্যুতের নামে ১৮০ একর জমি দখলের মূল হোতা আলী আজগার টগর। সহযোগী ছিল যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। যদিও ভাগ বাটারা নিয়ে জাহাঙ্গীরের সাথে তার বিভেদ সৃষ্টি হয়। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি কোম্পানির কাছে কয়েকশো কোটি টাকা নিয়ে ১৮০ একর জমি যাহা তিন ফসলি জমি, সাইক্লেষ্ট এনার্জি পিপিআই লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের কাছে হস্তান্তর করেন। জমি দখল করতে গিয়েই গন্ডগোল শুরু হয়। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে এই খবর ছাপা হয়েছিলো। বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডিবিসি নিউজ স্পেশাল এ ছাপা হয় প্রতিদিন এভারেজ ৬০ কেজি সোনা ভারতে যাচ্ছে বদলে আসছে ফেনসিডিল, দৈনিক মাথাভাঙ্গা খবর ছাপায় জীবননগরের খয়েরহুদা গ্রামে বাড়িঘর ভাংচুর করে দখল করার অভিযোগ আলী আজগার টগরের নামে।
খয়েরহুদা গ্রামের মোল্লাপাড়ার মৃত ফজর আলী মোল্লার ছেলে জহির মোল্লা অভিযোগ করেন ২২ বছর পূর্বে তিনি বসতবাড়ি ক্রয় করেন যাহা চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের এমপি আলী আজগর টগর তার লোকজন সহ স্থানীয় গোন্ডা বাহিনী দিয়ে দখল করে নিয়েছিলেন।
বিগত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে চুয়াডাঙ্গা ২ আসনে দামুড়হদাতে দুইটি বড় সোনার চালান ধরা পড়ে যার মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
বিশেষ এক সূত্র থেকে জানা যায় এই চালানের মালিক ছিলেন আলী আজগার টগর এবং সহযোগী ছিলেন তৎকালীন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের এসপি। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের ভোট বিহিন কথিত সাবেক এমপি আলী আজগার টগর সম্প্রতি তিনি ৪০ লক্ষ ডলার পাচারের ঘটনায় জড়িত রয়েছেন, যার তদন্ত চলমান রয়েছে ।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগার টগরের সহযোগী দর্শনার মানি এক্সচেঞ্জের মালিক আরিফ এর মাধ্যমে ৪০ লক্ষ ডলার ভারতে পাচার করেছেন। টগরের এই সমস্ত অপকর্মের টাকা দিয়ে তার দুই ভাইয়ের নামে কলকাতার সল্ট লেকে দুটি বিলাশ বহুল ফ্লাট ক্রয় করেছেন।