আমেনা বেগম। বয়স ৬০ পেরিয়েছে। মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের গৌড়দহ গ্রামের ক্যানেলপাড়ার বাসিন্দা। বয়সের ভারে ঠিকমতো চোখে দেখতে পান না। মাঝে মাঝে দুচোখ চুলকায় এবং পানি পড়ে। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ৫ টাকার টিকিট কেটে ডাক্তার দেখান। তবে চোখের জন্য সেখানকার প্রশিক্ষিত নার্সরা তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মেশিনের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট ভিডিও কনসালটেশনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা দেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চশমা বিনামূল্যে তাকে প্রদান করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
শুধু আমেনা বেগমই নয়, তার মতো আরও অনেক চক্ষু রোগী এই সেবা নিয়েছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ বছরের আগষ্ট মাসে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসায় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন আই কেয়ার সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, কমিউনিটি আই সেন্টার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্ধারিত একটি কক্ষে অবস্থিত চক্ষু বিষয়ক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত। যেখানে দেশে ও বিদেশে চক্ষু বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্সরা চক্ষু সেবায় সহায়ক হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
চক্ষু বিষয়ে প্রশিক্ষিত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের সহায়তায় ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে নিকটবর্তী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত বেইজ সেন্টারে অবস্থানরত (পাবনা) চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অনলাইনে ভিডিও কনসালটেশনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমন্বিত উন্নত চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা কমিউনিটি আই সেন্টারের উদ্দেশ্য।
বেইজ হাসপাতালের টেলিকনসালটেশন রুমে একাধিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থেকে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত চক্ষু বিষয়ে সুপ্রশিক্ষিত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের পাঠানো মেডিকেল রেকর্ড পর্যালোচনা এবং নার্স ও রোগীর সঙ্গে বেইজ হাসপাতাল থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ই-সাইন যুক্ত ব্যবস্থাপত্র কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে অনলাইনে পাঠাবেন। বেইজ হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থাপত্রের প্রিন্টকপি অনুযায়ী সিনিয়র স্টাফ নার্স রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ ও পাওয়ার চশমা দেবেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুইজন সিনিয়র নার্স নীলা ও ঝুমা খাতুন চোখের রোগ নির্ণয়, চোখের চশমার পাওয়ার নির্ধারণসহ অত্যন্ত জটিল রোগীরা এই হাসপাতাল হতে অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন।
মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: পিযুষ কুমার সাহা বলেন, হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চালুকৃত এ সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ জনবলের দ্বারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চক্ষু চিকিৎসার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। অন্ধজনের চোখে আলো দেওয়াই এই প্রকল্পের কাজ। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্য চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি এই সেবাও আমরা দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ আছেন, যারা চোখে দেখতে পেতেন না। তারা কোথায় যাবেন, কোথায় চিকিৎসা নেবেন তাও জানতেন না, কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই, এখন মানুষ যথেষ্ট সচেতন। ফলে অনেক মানুষ অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এটা আমাদের জন্য বিরাট একটি পাওয়া। এটি কেবল সম্ভব হয়েছে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফীন বলেন, সরকারের অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ এটি। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী খুব সহজেই চক্ষু চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।