মেহেরপুরের গাংনীর চাঞ্চল্যকর প্রবাস ফেরৎ হাসানুজ্জামান মিলন হত্যা মামলার সকল আসামি আসামিকে বেকুসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে তার স্ত্রী মানছুরা, শ্যালিকা ও ভাইরা রয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিকালে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ মন্জুরুল ইমাম চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটির রায় দেন। মামলার রায় ঘোষণার সাথে সাথে তার স্ত্রী মানছুরা খাতুন আদালতের কাঠগড়াই ভেঙ্গে পড়েন।
২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সকালের দিকে গাংনী উপজেলা শহরের সিনেমাহলপাড়াস্থ জিল্লুর দারোগার পরিত্যক্তু বিল্ডিং এর পিছনের জঙ্গলের মধ্যে থেকে প্রবাসফেরত হাসানুজ্জামান ওরফে মিলনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মিলনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ ছিল। ওই ঘটনায় নিহত মিলনের পিতা আব্দুল হামিদ বাদি হয়ে মিলনের স্ত্রী মানছুরা খাতুন, তার দুলাভাই আব্দুর রশিদ, মানছুরার ছোট বোন মছনয়ারা খাতুন মুন্নি এবং গাংনীর ব্যবসায়ী মোজাম্মেলকে আসামি করে গাংনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৬, জি আর কেস নং ১২৯/২০১৬।
ওই সময় মিলনের স্ত্রী মানছুরা খাতুনকে পুলিশ আটক করেন। এছাড়া মামলার অপর আসামি স্থানীয় ব্যবসায়ী মোজাম্মেলকে পুলিশ আটক করে। তারা দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পান। ওই সময় মোজাম্মেলকে নিহতের স্ত্রী মানছুরার পরোকীয় প্রেমিক হিসেবে মামলার আসামি করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার প্রাথমিক তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় মোট ২৩ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন। মামলার রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিডিউটের আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম, এবং আসামীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবি একেএম শফিকুল আলম ও একেএম জিল্লুর রহমান কৌশুলি ছিলেন। এদিকে মামলার রায় ঘোষণার সাথে সাথেই আসামি মানছুরা এবং মছনুয়ারা খাতুন মুন্নি আদালতের কাঠগড়াই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উল্লেখ্য, মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ মল্লিকের ছেলে কুয়েত ফেরৎ হাসানুজ্জামান মিলনের ক্ষত বিক্ষত মরদেহ ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সকালে গাংনী পৌর এলাকার ঝিনেরপুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পাশে ঝোপের ভিতর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। মাথায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয় তাকে। সেসময় মিলনের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় স্ত্রীর সাথে গাংনীর ব্যবসায়ী মোজাম্মেলের পরকীয়া প্রেমের বলি হয়েছে মিলন।
হত্যকান্ডে জড়িত সন্দেহে নিহতের স্ত্রী মানছুরা, শ্যালিকা মছনুয়ারা খাতুন মুন্নি তার স্বামী পুলিশ কনস্টেবল আব্দুর রশিকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন নিহতের পরিবারের লোকজন। পরে পুলিশ তাদের এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নিলে বিজ্ঞ বিচারক তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। কুয়েত থেকে সম্প্রতি ছুটিতে দেশে ফিরে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে গাংনী শহরের বনবিভাগ পাড়ার নিজ বাড়িতে বসবাস করছিলেন তিনি।
ঘটনার আগের দিন বিকেলে গ্রামের বাড়ি শ্যামপুর থেকে গাংনীর বাড়ির উদ্দেশে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেয়। সকালে মিলনের স্ত্রী তাদেরকে জানায় মিলনের কোনো খোঁজ মিলছে না। পরে ঘটানাস্থলে এসে তারা মিলনের লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন।