বাসিপচা তরকারি আর ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। জমিজমা যা ছিল জোর করে সব লিখে নিয়েছে ছেলে-মেয়েরা। আমরা নাকি আবর্জনা হয়ে গেছি তাই বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছে ছেলেরা। বড় মেয়ের ভাগের একটা বাশ বাগানে কিছু পুরোনো টিনের ছাউনিতে কোন মতে ঠাই হয়েছে। বিদ্যুতের আলো কি তা চোখে দেখেনি প্রায় দশ বছর। মাস খানেক হলো প্রতিবেশিরা একটি বৈদ্যুতিক বাল্বের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে মেয়েরা এসে কিছু চাল ডাল দিয়ে যায়, সেগুলো প্রতিবেশির হাড়িতে দিয়ে আসি তারা রান্না করে দিলে খাই। যেদিন রান্নার সুযোগ হয়না সেদিন না খেয়েই দিন পার করে দিই। সর্বশেষ কবে একটু পেটপুরে ভালো কিছু খেতে পেরেছি মনে পড়েনা। গত পরশুদিনও ছেলের বউরা এসে পচা মাছ আর কচু সাথে বাসি ভাত দিয়ে গেছে সেগুলো দুজনে মিলে দুবেলা খেয়েছি। এভাবেই চোখের পানি ছেড়ে দুঃখের কথা গুলো বলছিলেন ৯৫ বছর বয়সি করিমন নেছা। কথা গুলো শুনে হু হু করে কেদে উঠলেন পাশে বসা করিমন নেছার স্বামী ১০৮ বছর বয়সি রহমতুল্লাহ শেখ।
মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের দক্ষিনপাড়ার একটি পরিত্যক্ত বাশ বাগানে বসবাস করে শতবর্ষী এই দম্পতি। দাম্পতিক জীবনে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম দিলেও ঠাই হয়নি তাদের কাছে। বয়সের ভারে নুয়েপড়া, চলাচলে অক্ষম এই দম্পতির শরীরে বাসা বেধেছে নানা রোগ বালাই। ওষুধপত্র তো দুরের কথা খোজ নেওয়ারও যেন কেউ নেই।
রহমতুল্লাহ দম্পতির বাসস্থানে গিয়ে দেখা যায় মাটির মেঝেতে পাটি পেড়ে করিমন নেছা টিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে আর রহমুল্লাহ শেখ একটি পুরোনো বালিশ মাথায় দিয়ে শুয়ে আছে। পরে এই প্রতিবেদক সহ কয়েকজন মিলে বাইরে এনে চেয়ারে বসানো হলো রহমতুল্লাকে। জানতে চাওয়া হলো তাদের এই হাল কেন। প্রথমে ভাবছিলেন তাদের ছেলেরা হয়তো এসেছে, তাই তিনি কিছু বলতে চাচ্ছিলেন না ভয়ে। চোখে কম দেখতে পাওয়া রহমতুল্লাহ বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন ছেলেরা নেই তো। তারা থাকলে তো আমাদের মেরেই ফেলবে। মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে অনেক আগেই জমিজমা সব লিখে নিয়ে আমাদের এখানে ফেলে গেছে। তাদের নামে কিছু বললে হয়তো তারা এবার আমাদের মেরেই ফেলেবে। কাদো কাদো সুরে অস্পষ্ট ভাষায় রহমতুল্লাহ আরও বলেন, আমাদের আর কোন আশা ভরসা নেই। এখন শুধু মরার অপেক্ষা করছি বাপ। আমাদের জন্য দুয়া করো।
প্রতিবেশিরা জানান, তাদের এই জীবনে ছেলে-মেয়ে থেকেও নেই। আমরা যত টুকু পারি তাদের দেখি। আমাদের কাছে মাঝে মাঝে রান্নার জন্য চাল দেয়। তা রান্না করে দিই। পাশাপাশি আমরা নিজেরাও খাবার দাবার দিই।
এব্যাপারে ছেলেদের সাথে যোগযোগ করা হলে কেউ কিছু বলতে রাজি হয়নি। তবে বড় ছেলে আজিল শেখের স্ত্রী বলেন, আমরাই তো দেখাশুনা করি। তাছাড়া আবার কে করে।
শতবর্ষী এই দম্পতির মানবেতর জীবন-যাপন করার ব্যাপারে জানেত চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ডালিম হোসেন জানান, রহমতুল্লার বয়ষ্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেটা দিয়ে কোন মতে চলে। তাছাড়া পাড়া প্রতিবেশি ও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ওষুধপত্র কেনার ব্যবস্থা করি। এছাড়াতো আমারও কিছু করার নেই।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, এরকম দম্পতির ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য ছিলনা। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। উপজেলা প্রশাসন থেকে যতটুকু সম্ভব আমি তাদের জন্য ভালো কিছু ব্যবস্থা করব।