পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটিতে জনতার ঢল নেমেছে মেহেরপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। রোদ বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যেও থেমে নেই বিনোদন পিপাষুদের ঘুরাঘুরি। সকাল থেকেই যেন বিনোদন স্পটগুলোতে আসছে হাজার হাজার নারী পুরুষ।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর, বৃটিশ বেনিয়াদের আমঝুপি কুঠিবাড়ি ও ভাটপাড়া কুঠিবাড়ি (বর্তমানে ডিসি ইকো পার্ক ভাটপাড়া) এবং জেলার অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। মুলত ঈদের দিন থেকেই লোকজনের সমাগম শুরু হয়েছে এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। চলবে এখনও দুই থেকে তিনদিন। বিনোদনের জন্য মেহেরপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে এসব স্পটগুলো।
স্বাধীনতার সূতিকাগার ঐতিহাসিক মৃুজিবনগরে আসা পার্শ্ববর্তি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার আরমান আলী ও তার স্ত্রী নাসরিন সুলতানা জানালেন ঈদে একটু ঘোরাঘুরি করতেই এখানে আসা। এখানকার স্থাপনাগুলো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্ত্বিক। তবে এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়া পাবলিক সৌচাগার না থাকায় নারীদের বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
আলমডাঙ্গার জামজামি গ্রাম থেকে আসা যুবক ফরহাদ হোসেন, আলম হোসেন, নাহিদ হাসান ও সাজিদ রহমান জানান, আমরা ৩ টি নসিমনে চড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক এসেছি এখানে। আমরা প্রতিবারই এখানে ঘুরতে আসি। এখানে প্রতি বছরই লাখো জনতার ঢল নামে। আমরা মূলত ঈদের দ্বিতীয় দিনে এখানে আসি। মুজিবনগরের বিশাল আম্রকাননের ছায়ায় ঘুরতে বেশ ভালই লাগে। এছাড়া এখানে মহান স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো আমাদের দেশ প্রেমিক হতে সহায়তা করে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার সাতমাইল গ্রামের আবু সালেহ তার পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে এসেছেন ঈদের ঘুরাঘুরি করতে মেহেরপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। তিনি মুজিবনগর ছাড়াও আমঝুপি নীলকুঠি ও গাংনীর ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক ঘুরেছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। তিনি বলেন, স্ত্রী ও তার ছেলে রুপম হোসেনকে ঐতিহাসিক এ স্থানগুলো দেখাতে পেরে বেশ গর্বিত। কারন, এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের যেমন গৌরবান্বিত ইতিহাস, তেমনী রয়েছে বৃটিশ বেনীয়াদের নির্মম অত্যাচারের স্মৃতিচিহৃ। তাই বিনোদন পিয়াসীদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্স, ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্ক ও আমঝুপি নীলকুঠি।
বিনোদনের প্রত্যাশায় বাস-ট্রাক, মোটর সাইকেল, নছিমন, করিমন, আলমসাধুযোগে এসব স্থানে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা।
স্থানীয় দর্শনার্থী ছাড়াও মাইক, ব্যান্ড ও ভেপু বাজিয়ে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমেছে মুজিবনগরে। ভ্রমণ পিপাসু এসব মানুষের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে মুজিবনগর কমপ্লেক্স।
মুজিবনগরে বিশাল আম্রকানন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ভিত্তিক বাংলাদেশের মানচিত্র, স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন মূর্যাল, সরকারি শিশু পরিবার, ছয়স্তর বিশিষ্ট গোলাপ বাগান, শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা।
মুজিবনগর কমপ্লেক্সে আনসারদের নেতৃত্বে পাহারায় আছেন অর্ধশতাধিক আনসার সদস্য। ঈদ-পরবর্তী অতিরিক্ত লোক সমাগমে যে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য এখানে নজরদারি রেখেছে মুজিবনগর থানা পুলিশ।
এদিকে গাংনী উপজেলা শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দুরের পথ ভাটপাড়া ডিসি ইকো পার্ক। বৃটিশ বেনীয়াদের নীলকুঠি সেজেছে নতুন রুপে। এখানে এখন ভ্রমন পিপাষূদের মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য রয়েছে বিনোদনের নানা উপকরণ। কেবল কার, আযব গুহা, ট্রেন ভ্রমন, ঘোড়াই চড়া, নৌকা ভ্রমন, শিশুদের মটরসাইকেল চালানো থেকে শুরু করে সব ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা যেন বিনোদন পিপাষুদের আকর্ষণ করছে নানাভাবে। ঈদের দিন থেকেই শুরু হয়েছে উপচে পড়া ভীড়।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেছেন, ভ্রমন পিপাষুদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেহেরপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, বৈশ্বিক সমস্যা কেটে যাওয়ার পর মানুষের মাঝে নতুন আমেজ তৈরী হয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বিনোদন পিপাষু হয়ে উঠেছেন। এবার মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছেন। আইনশৃংখলা ভাল রয়েছে।