এলাকায় তেমন চুরি ডাকাতি নেই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। কিন্তু চুরি ডাকাতির আজগুবে এক আতংক ছড়িয়ে দিনমজুরদের জোর করে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ও পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ ও কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার হুমকী ধামকী ও মিথ্যা মামলার ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিলেও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে চলছে চরম ক্ষোভ।
তবে, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গ্রামের মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মানুষকে দিয়ে রাত জেগে পাহারা বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কাউকে হুমকী ধামকী দেওয়া হয়না।
আর ক্যাম্প পুলিশ বলছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ সঠিক নয়, সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত রবিবার বিকালে সরেজমিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামে গিয়ে স্থানীয় অর্ধশত গ্রামবাসি, আওয়ামী লীগের নেতা, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বারাদী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের সাথে কথা বলে এ সংবাদ লেখা হয়।
দিন মজুর লাল মহাম্মদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ও আমার মত এই গ্রামবাসি সারাদিন কাজকাম করে শরীরে আর পারিনা। শরীর অসুস্থ থাকলেও রাতে এসে গ্রাম পাহারা দিতে হচ্ছে। আমি আজ ১২ দিন একইভাবে রাত ১২ টা থেকে রাত টা পর্যন্ত পাহারা দিচ্ছি।
গ্রামের ৭০উর্দ্ধ রবিউল ইসলাম বলেছেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। আমার শরীর চলেনা। তারপরেও পুলিশ ও গ্রামের কয়েকজন নেতার অব্যাহত হুমকী ধামকীতে পাহারা দিতে হচ্ছে আমাকে।
দিন মজুর জামিরুল ইসলাম বলেছেন, দেড় শ টাকার মুনিশ খাইটি তিন শ টাকার লাইট কিনে রাতে গ্রাম পাহারা দিতে হবে। কিছূ বললে আসবে হুমকী। গ্রাম ছাড়া হতে হবে। এজন্য ভয়ে ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে আসি।
একই অভিযোগ গ্রামের অন্যান্য মানুষদের। তাদের দাবি দেশে পুলিশ থাকতে আমাদের মত খেটে খাওয়া মানুষদের কেন রাত জেগে পাহারা দিতে হবে? তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, গ্রাম পাহারা দিতে না চাইলে দারোগা দেবাশীষ অধিকারী তাদের ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে শাস্তি দেওয়ার হুমকী দেন। এছাড়া বাড়িতে বাড়িতে এসে হুমকী ধামকী দিয়ে আতংক তৈরী করে দেন।
গ্রাম আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, দু মাস আগে মাঠের কয়েকটি স্যালো মেশিনের মটর চুরি ও পাশের গ্রামের এক ব্যাক্তির তিনটি গরু চুরি হয়েছে। এইসব ছোটখাটো চুরি বন্ধ করতেই রাজনগর গ্রামের শেখপাড়া, বেইলিরমাঠপাড়া ও মল্লিকপাড়াতে প্রতিদিন তিনটি গ্রুপে ৩০ জন লোক রাত পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ওলিল হোসেন, সহসভাপতি আব্দুস সালাম, পুলিশ কমিটির সভাপতি জুগিন্দা গ্রামের আইনাল হকসহ, দরবেশপুর গ্রামের কয়েকজন নেতা দরবেশপুর গ্রামে বসে বারাদী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ দেবাশীষ অধিকারী মিলে মিটিং করে রাজনগর ও দরবেশপুর গ্রামে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এ প্রসঙ্গে পিরোজপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য (মেম্বর) আরমান আলী জানান, প্রচন্ড শীতের সময় সাধারণত এলাকায় দু একটি চুরি সংঘটিত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পুলিশের সাথে বসেই রাত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এ পাহারা দেওয়ার পক্ষে নন তিনি।
বারাদী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ অধিকারী তার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ওসি স্যারের হুকুম তামিল করি মাত্র। আপনারা আমার ওসি স্যারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তবে, এলাকার মানুষ জন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে এলাকা থেকে চুরি যাওয়া গরু, মাঠের স্যালো মেশিনের মটর ও বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির সাথে জড়িত কাউকে আটক করা গেছে কিনা, মামলা হয়েছে কিনা ও চুরির মাল উদ্ধার করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, গরু চুরি ও মটর চুরির ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। তাই চোর ধরা বা সেগুলো উদ্ধার করার কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। এসব বিষয়েও তেমন কোনো কিছু বলতে পারেননি তিনি।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, রাত জেগে গ্রামবাসীদের পাহারা দেওয়ার কোন প্রবিশন নেই। শীতকালীন সময়ে ওই এলাকায় চুরি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই গ্রামবাসীরা পাহারা দিচ্ছে। তবে কেই পাহারা দিতে না চাইলে দেবে না।