একই আকৃতির শহীদ মিনার নির্মাণে উচ্চ আদালতের রুল থাকলেও মেহেরপুরের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ভিন্ন আদলের শহীদ মিনার। দেখতে নান্দনিক হলেও সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন শহীদ মিনারের বরাদ্দ না পাওয়ায় সেগুলো ভাঙছে না প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে প্রাণ দেওয়া শহীদদের স্মরণে দেশে স্থাপিত শহীদ মিনারগুলো একেক স্থানে একেক কাঠামোর। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের যে কাঠামো তার সঙ্গে অনেকগুলোর মিল নেই। বিভিন্ন কাঠামোর এসব স্থাপনা সম্পর্কে অনেকের প্রশ্ন এগুলো কি আদতে শহীদ মিনার? অনেক বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চললেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাঠামো, নকশা অনুসরণ করে দেশে-বিদেশে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে গত বছরের ১৪ জুন হাইকোর্ট রুল জারি করেন। কিন্তু বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব আসেনি। আর সুপ্রিম কোর্টের যে আইনজীবীর রিটে আদালত রুল জারি করেছিলেন, সে আইনজীবীও রুলের জবাব না আসার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেননি। ফলে রুল জারির মধ্যেই আটকে আছে রিটটির কার্যকারিতা।
এ বিষয়ে গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম। প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ রুল দেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাঠামো, নকশা অনুসরণ করে দেশে-বিদেশে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাঠামো অনুসরণ করে দেশ-বিদেশে একই ধরনের শহীদ মিনার নির্মাণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। সংস্কৃতিসচিব এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এদিকে মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের কবী নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলে ১৯৬৭ সালে পিলারের মত প্যাচানো একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সেটি ভেঙে ফেলার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙতে পারছে না। নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করেছেন। এখনো সে বরাদ্দ পাননি।
গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজে রয়েছে স্মৃতিসৌধ আকৃতির নান্দনিক শহীদ মিনার। এছাড়া গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে একই আকৃতির শহীদ মিনার।
মেহেরপুর কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিলের সহকারী প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষা অফিস থেকে ভেঙে একই আদলের শহীদ মিনার নির্মাণের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়রা কোন বাঁধা হবে কি না সেই চিন্তাই সেটি ভাঙতে পারিনি। তবে নতুন করে শহীদ মিনারের জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ওটা ভেঙে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নুরানী বলেন, মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে শহীদ মিনার দেখে তার আদলে ২০০৮ সালের দিকে স্কুলের টাকা দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সরকারি ভাবে একই আদলের শহীদ মিনারের নির্দেশনা আসে। নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ পেলে একই আদালতের শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
মেহেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণ করার পরিপত্র সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। যারা বিকৃত ডিজাইনের শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন সেগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।