মেহেরপুরের গাংনীতে অভিযান চালিয়ে একটি নাইন স্যুটারগান, দেশীয় তৈরী ধারালো অস্ত্র, গুলি, কৃষকদের জন্য প্রণোদনার বীজ, সার কীটনাশক ও কম্বলসহ আলোচিত ইউপি সদস্য আজমাইন হোসেন টুটুলকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী।
গ্রেফতারকৃত আজমাইন হোসেন টুটুল গাংনী উপজেলার কাথুলি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের দুইবারের নির্বাচিত সদস্য (মেম্বর) ও লক্ষিনারায়ানপুর ধলা গ্রামের আক্কাছ আলীর ছেলে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব—১২) ও গাংনী থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী একটি টিম গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ৯ টা থেকে শুরু করে রাতভর অভিযান চালান।
এসময় তার বাড়ি থেকে একটি নাইন স্যুটারগান, ২ রাউন্ড গুলি, দেশীয় তৈরী ৪টি ধারালো অস্ত্র হাসুয়া, কৃষি অধিদপ্তরের আওতায় দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৪৫ প্যাকেট সরিষা বীজ, ৯ প্যাকেট মাস কলাই বীজ, ১৫ বস্তা টিএসপি, ডিএপি ও পটাশ সার, ত্রাণের ২০ টি কম্বল, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বরাদ্দকৃত হতদরিদ্র নারীদের ২টি সেলাই মেশিন, পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত ২০ কেজি চাউল ও ২ টি চাউল রাখার ড্রাম জব্দ করা হয়েছে।
অভিযানে ২৭ রেজিমেন্ট আর্টিলারীর মেহেরপুর সেনাবাহিনী ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন রওশন, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব—১২) ক্রাইম প্রিভেনশন সেন্টার—৩ মেহেরপুর ক্যাম্পের কমান্ডার সিনিয়র এএসপি আশরাফ উদ্দীন ও গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামানসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব—১২) ক্রাইম প্রিভেনশন সেন্টার—৩ মেহেরপুর ক্যাম্পের কমান্ডার সিনিয়র এএসপি আশরাফ উদ্দীন অভিযান শেষে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রীফ করেন। তিনি জানান, আজমাইন হোসেন টুটুল মেম্বরের বাড়িতে অস্ত্র ও সরকারি বিভিন্ন মালামাল রয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাংনী উপজেলার লক্ষিনারায়নপুর ধলা গ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। শনিবার দিবাগত রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়। আজমাইন হোসেন টুটুলকে গ্রেফতার করার পর তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক বাড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ধারালো অস্ত্র, কম্বল, কৃষি প্রণোদনার বীজ, সার, কম্বল, সেলাই মেশিনসহ অন্যান্য মালামাল জব্দ করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। আজমাইন হোসেন টুটুলকে গাংনী থানায় নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাথুলি ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য বিএনপি নেতা আজমাইন হোসেন টুটুল ও সাবেক মেম্বর গাংনী উপজেলা কৃষকলীগের (বরখাস্তকৃত) সভাপতি আতিয়ার রহমানের মধ্যে রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মামলা, হামলা লুটপাটের মত ঘটনা ঘটে আসছিল।
কৃষক লীগ নেতা আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে আজমাইন হোসেন টুটুলের বড় ভাই এনামুল ইসলাম নইলুকে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই মাইলমারী গ্রামের রাস্তার উপর রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ২০০৯ সালে অপর ভাই সেন্টু হোসেনকে সালিশ বৈঠক চলাকালে কুপিয়ে হত্যা করে। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে ৮ নভেম্বর রোববার সকালে মেম্বর প্রার্থী আজমাইন হোসেন টুটুল পশ্চিমপাড়া এলাকায় ভোট চাইতে প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে কুপিয়ে আহত করেন।খবর পেয়ে ফুফাত ভাই সাহাদুল ইসলাম ও জাহারুল ইসলাম তাকে বাঁচাতে ছুটে যায়। সেখানেই জাহারুল ইসলাম ও সাহাদুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আতিয়ার রহমানের লোকজন। এসব ঘটনায় কয়েকটি মামলায় আতিয়ার রহমান ও তার বেশ কয়েকজনকে ফাঁসির দন্ড দিয়েছে আদালত। সেই আতিয়ার রহমানসহ তাঁর লোকজন জেলে রয়েছেন। এরপর থেকে আজমাইন হোসেন টুটুল এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন।