মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় জামায়াতের সুরা সদস্য মাওলানা তাজ উদ্দিন খান বলেন, ইতিহাস স্বাক্ষী দেই ৭৫ সালে শেখ মজিবর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর তার জানাজা জোটেনি। তার মেয়ে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় পরণের কাপড়টাও গুছিয়ে নিতে পারেনি।
এতো দাপট, এতো কলিজা এতো ক্ষমতা অথচ, আওয়ামী লীগকে মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
১৫ বছরে মেহেরপুরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সন্ত্রাসী দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিরাট গণমিছিল ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাওলানা তাজ উদ্দিন খান।
গতকাল রবিবার বিকালে মেহেরপুর শহীদ শামসুজ্জোহা নহর উদ্যাণে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা মাহবুব উল আলম, জেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, জেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন, গাংনী উপজেলা জামায়াতের আমীর ডাক্তার রবিউল ইসলাম, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মুকুল, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি ও পৌরসভার কাউন্সিলর সোহেল রানা ডলার, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা সোহেল রানা, মুজিবনগর উপজেলা আমীর খান জাহান আলী, গাংনী পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি সাব্বির হুসাইন, পৌর শিবিরের সভাপতি বকুল হোসাইন প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা তাজ উদ্দিন খান আরো বলেন, জুলাইয়ের ৫ তারিখ পর্যন্ত যারা অত্যাচার জুলুম করেছে, অস্ত্র, বন্দুক, লাঠি হাতে নিয়ে ছাত্র জনতাকে গুলি করে মেরেছে, সারাদেশের মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন করেছে এখন সময়ের দাবি তাদেরকে আইনীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা এলাকার সম্মানিত নেতাকর্মীদের জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যা) করেছে, আমরা সেই ঘাতকদের বিচার চাই।
তাজ উদ্দিন খান আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের খাঁচার মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল। এই ১৫ বছরে আমাদের স্বাধীনতা নেই অথচ, তারা আমাদের স্বাধীনতার গল্প শোনায়, বঙ্গবন্ধু ট্যানেলের গল্প শোনায়।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী সরকার ছোট্ট জেলা মেহেরপুরে জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে ৮৬ টি মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতের ১০০ নারী কর্মীসহ এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় জেল দিয়ে বারবার রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আগুন দিয়ে জালিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ি ঘর। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি করতে গিয়ে এতো ত্যাগ, এতো কোরবানি আর কোনো রাজনৈতিক দলকে দিতে হয়নি।
এমন কোনো অপরাধ নেই যা জামায়াতের উপর করা হয়নি। আর কত জুলুম নির্যাতন করলে জুলুমের শেষ হয় তা আমাদের জানা নেই। আমাদের হাজারো নেতাকর্মী তাদের বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। মাঠে ঘাটে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। বিগত ১৭ বছর যাবৎ জামায়াত শিবিরকে এসব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন আমরা কি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছি? তারপরেও জামায়াত ছিলো, জামায়াত আছে, আগামীতেও জামায়াত থাকবে।
এটা যে এতো অবিচার ছিলো শেখ হাসিনার পালানো দেখলেই বোঝা যায়। পালানোর সময় তার নেতাকর্মীর দিকে তাকানোর সময় ছিলোনা শেখ হাসিনার।
মাওলানা তাজ উদ্দিন খান আরো বলেন, মেহেরপুর জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও তৎকালিন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। যারা পরামর্শ করে ঠান্ডা মাথায় প্রশাসন দিয়ে হত্যা করেছে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
যারা তারিক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, সোলাইমান হোসেন, দেলওয়ার হোসেন, আব্বাছ আলীকে হত্যা করেছে আমরা সেইসব খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এসব খুনের বিচার করতে না পারলে মহান রবের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
ছাত্র আন্দোলন ও তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এই স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু এবং যারা আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
জামায়াতের জেলা থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে বন্যাদূর্গত বানভাসি মানুষের সাহায্যের জন্য পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।
এর আগে তাজউদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি বিশাল গণ মিছিল মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মেহেরপুর শহীদ ড. শামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গণ মিছিলে যোগ দেন।