মেহেরপুর সহ সারাদেশে টানা বর্ষনে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে জন জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষরা। কৃষক, ভ্যান-রিক্সা চালক, শ্রমিকরা বসে বসে দিন পার করছেন।
শুধু তাইই নয় লাগাতার বর্ষনে আমন ধান, কপি, নতুন লাগানো পিয়াঁজ, রসুনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়। আবাদি জমিগুলো হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে।
শোলমারী গ্রামের আব্দুল জাব্বার জানান, দুই বিঘা আগাম পিয়াঁজ লাগিয়ে ছিলাম কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সে জমি এখন পানির নিচে। এতে আমার প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।
তেরোঘরিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, আমন ধান ছিল দুই বিঘা, কপি ছিল এক বিঘা অসময়ের এ বৃষ্টিতে সবকিছু পানির নিচে।
এদিকে ব্যাস্ত মেহেরপুরে বৃষ্টির কারনে অনেকটাই ফাকা দেখা গেছে। নেই মানুষের কোলাহল, নেই গাড়ি-ঘোড়ার চাপ।
মেহেরপুর শহরের রিক্স চালক চাঁদ আলী জানান, বাড়ি রাজাপুর, পেটের দায়ে রিক্সা চালায়। দুইদিন ধরে দুইশো টাকার কাজও করতে পারিনি। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই যে দুইএকজন আছে তারা সবাই অটোতে যাতায়াত করছে।
দিন মজুর জয়নাল, হাফিজুল, কালাম জানান, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজের সন্ধানে মেহেরপুরে চলে আসি। গত বৃহস্পতিবার থেকে কোন কাজ নেই। কেউ কাজের জন্য ডাকছে না। বাড়িতে ছেলে সংসার আছে এইভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
টানা বৃষ্টিতে গ্রামের চায়ের দোকান গুলোতে ব্যাপক লোকজনের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কাজ-কাম করতে না পেরে চা আড্ডাতে মেতেছে অনেকেই।
মুজিবনগর অফিস জানাই, টানা বৃষ্টিতে মুজিবনগর পর্যটন কেন্দ্র পুরোপুরি ফাকা। সেখানকার ব্যবসায়ীরা অনেকটা খেয়ে-ঘুমিয়ে দিন পার করছে। সেই সাথে নতুন ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গাংনী অফিস থেকে জানাই, লাগাতার বৃষ্টিতে জন-জীবন বিপর্যস্ত। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দিন মজুর, চাকরিজীবি সবাই পড়েছে বিপদে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা যায়, বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি থাকতে পারে আরও দুইদিন। আগামী সোমবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, যেহেতু মেহেরপুর বন্যা মুক্ত এলাকা তাই এখানে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যদি এরকম বৃষ্টি লেগে থাকে তাহলে শীতকালিন সবজীর কিছুটা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন বৃষ্টি হওয়ার উপযুক্ত সময় না।
দুইদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে । এতে শীতকালিন সবজীর জন্য জমির জোঁ আসতে দেরি হবে। ফসল চাষ এ বছর একটু পিছিয়ে যাবে। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় তদারকি করছে। ফসলের যেন ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে কৃষকদের যে কোন সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক