মেহেরপুরে ঋণ দেওয়ার নাম করে গ্রাহকের কাছ খেকে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা সিডার’ ক্ষুদ্র ঋণ কমর্সূচি নামের খটি এনজিও।
আজ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে মেহেরপুর শহরের কুষ্টিয়া সড়কের দিঘীর পাড়া এলাকায় এনজিওটির অফিসে গ্রাহকরা ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিস গুটিয়ে পালিয়েছে এনজিওর কর্মকর্তারা। সে সময় সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রাহকরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনা, গোপালপুর, শ্যামপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রাহক সংগ্রহ করে ঋণ দেওয়ার নামে ১০ শতাংশ করে জামানত সংগ্রহ করে সংস্থাটি। এনজিও সংস্থার মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার হিসেবে গ্রাহকদের কাছে আশরাফুল আলম নামে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করেন। এমন প্রত্যারনার স্বীকার হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ।
জানা গেছে, সপ্তাহ খানেক আগে আব্দুল মতিন নামের একজনের কাছে থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা অফিসে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। হঠাৎ দুএকদিন আসা যাওয়া করেন তারা।
আজ সোমবার গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার দিনে তারা আসবাবপত্র নিয়ে উধাও হয়েছে। তবে তাদের কখনো কেউ দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পরে বাড়ি মালিক এনজিও সাইনবোর্ড টি খুলে দেন।
এনজিওটির সদস্য নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামের সীমা খাতুন জানান, ৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে তার সাথে ১৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার তার ঋণের ৩ লাখ টাকা দেওয়া কথা কিন্তু সকালে অফিসে এসে দেখতে পান অফিসে কেউ নেই। আসবাবপত্রও নেই।
তিনি বলেন, তার স্বামীকে গোপন করে তিনি এ টাকা দিয়েছেন। তার স্বামী জানতে পারলে তাকে বাড়িতে উঠতে দেবে না। এখন পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।
একই গ্রামের হেলাল জানান, তার সাথেও ৩ লাখ ঋণ নেওয়ার কথা বলে ১৮ হাজার নেওয়া হয়েছে, নাজমা খাতুন, হাফিদজুল ইসলাম সহ মদনাডাঙ্গা গ্রাম থেকে ৯ জন দিয়েছেন ১ লাখ টাকা। এসময় তাদের কাছে সংস্থাটি পাসবই দেয় বলে জানান তারা।
কুতুরপুর গ্রামের সাজেদা খাতুন এক লাখ ঋণ পাবেন বলে দিয়েছেন ১০ হাজার টাকা, মর্জিনা খাতুন দিয়েছেন ৫ হাজার টাকা, হিরা খাতুন ৭ হাজার, আনোয়ার হোসেন ৭ হাজার টাকা। শ্যমপুরের ভ্যান চালক মাসুম হোসেন ২ লাখ টাকা ঋণ পাবেন বলে দিয়েছেন ১২ হাজার। ঋণ নিতে এসে অফিস উধাওয়ের খবর পেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এছাড়াও সকাল থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রাহকরা এসে অফিসে কাউকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সেখানে অবস্থান নেন।
খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাহকদের শান্ত করেন। এবং এনজিও কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি গ্রাহকদের আশ্বাস দেন।
তবে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কাজী কাদের ফজলে রাব্বী বলেন, “সিডার নামের কোন এনজিওর অনুমোদন মেহেরপুরে নেই। এক ধরণের প্রতারকরা নাম সর্বস্ব এনজিও খুলে মানুষের কাছে থেকে টাকা লগ্নি করে উধাও হচ্ছে। এদের থেকে সচেতন থাকতে হবে। তাদের কাছে টাকা দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের কাগজপত্র যাচাই করে নিতে হবে”।
এছাড়া জেলা সমবায় অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিডার ফাউন্ডেশন নামের কোন প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন তাদের দপ্তরেও নেই।
বাড়ির মালিক আব্দুল মতিন জানান, কয়েক দিন আগে সিডার এনজিও সংস্থার মেহেরপুর শাখার ম্যানেজার হিসেবে আশরাফুল আলম নামে একজন ১৪ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া চুক্তিতে বাসা ভাড়া নেন। ১০ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠিক ভাবে কাষক্রম শুরু করার কথা থাকলেও শনিবার থেকে এনজিও ম্যানেজারের ফোন বন্ধ পান। পরে বাড়ির সামনে গ্রাহকদের ভিড় জমতে দেখেন। বাসা ভাড়ার সময় একটি জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করেন তারা।