জাহাঙ্গীর হোসেন নিজের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গাতে হলেও বসবাস করতেন মুজিবনগর উপজেলার বল্লবপুর গ্রামে। তিনি পেশায় একজন ব্রাককর্মী। গত ২২ এপ্রিল মেহেরপুরের প্রথম করোনা পজিটিভ হিসেবে তাকে সনাক্ত করা হয়। মাত্র ১৪ দিনেই মারাত্মক করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করে এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ্য।
গত ৮ মে মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জাহাঙ্গীর হোসেনের নুমুনা পাঠাই পরিক্ষার জন্য। সে পরিক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুনরায় নমুনা পাঠানো হলে সে রিপোর্টও নেগেটিভ আসে। পরপর দুইবার তার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ায় মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জাহাঙ্গীরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সুস্থ্য ঘোষনা করে।
করেনা জয়ের গল্প শোনাতে গিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২২ এপ্রিল প্রথম যখন আমার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে তখন আমি একটু নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। পরে মনোবল শক্ত করে ডাক্তারি পর্রামর্শ মত একা একা হোম কোয়ারিন্টিনে থাকতাম। নিয়মিত গরম পানি দিয়ে গড়গড়া ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতাম। সবসময় পরিস্কার পরিছন্ন থাকতাম। আমার কাছ থেকে যাতে অন্য কোথাও ভাইরাসটি না ছড়িয়ে পরে সেজন্য মুখে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লোবস সবসময় ব্যবহার করতাম।
আমার স্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওসমান গনি আমাকে সাহস দিত। হোম কোয়ারিন্টিনে থাকা অবস্থায় সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা আমি পেয়েছি। তারা নিয়মিত আমার খোজ খবর রাখতো। আল্লাহর রহমতে খুব অল্পদিনেই আমি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছি।
অপর একজন হলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গ্রামের রাশেদুল ইসলাম। তিনি মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় পলি ফার্মেসীতে ডা. অলোক কুমার এর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। গত ৩০ এপ্রিল রাশেদুল ইসলামের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এর পর থেকেই তিনি বাড়িবাঁকা নিজ বাড়িতে ঘরোয়া চিকিৎসাতেই মাত্র ১৪ দিনেই জয় করে করোনা ভাইরাসকে।
গত ১৪ মে রাশেদুল ইসলামের নমুনা পরিক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। পুনরায় পরিক্ষা করা হলে সে রিপোর্টও নেগেটিভ হয়। পরপর দুইবার তার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ায় মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ রাশেদকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সুস্থ্য ঘোষনা করে।
করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমার করোনা পজিটিভ হওয়ার পর নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারিন্টিনে ছিলাম। ভেঙে না পড়ে আত্মবিশ্বাস রেখে শরীরের প্রতি যত্ন নিতাম। নিয়মিত ব্যায়াম করতাম, গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতাম, ভিামিন যুক্ত খাবার খেতাম, ডাক্তারের পরামর্শমত শুধু প্যারাসিটামল ওষুধ খেতাম।
জেলা সিভিল সার্জন নাসিরুদ্দিন বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে মেহেরপুরের করোনা পরিাস্থতি বেশ ভালো। এ পর্যন্ত মোট ৭ জন করোনা পজিটিভ রোগী সনাক্ত করেছি। এদের ভিতর মৃত এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ হয় এবং মুজিবনগর ও মেহেরপুর সদরে দুইজন করোনা পজিটিভ রোগী সুস্থ্য হয়েছে।
আমরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ যারা করোনা পজিটিভ হয়েছেন তাদের নিয়মিত খোজ খবর রাখছি। সকল সুযোগ সুবিধা তাদের দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে যারা সুস্থ্য হয়েছেন তাদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা তাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে সুস্থ্যতার ছাড়পত্র দিয়েছি।