মেহেরপুরে ব্রইলার টাইপের পেকিং জাতের হাঁস পালন করে সাবলম্বি হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা । সল্প বিনিয়োগ ও অল্প সময়ে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম ব্রইলার টাইপ পেকিং প্রজাতির হাঁস পালন। সহজ ব্যাবস্থাপনা ও ভালো বাজার দরের কারণে ব্রইলার টাইপ পেকিং জাতের হাঁস পালন জেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীদের সৌখিন ও পছন্দের পেশায় পরিনত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পরিবারের মাংসের চাহিদা পুরণ হছে অন্যদিকে বাড়তি আয়ের উৎস বলেও মনে করছেন গৃহিনীরা।
খামারী পর্যায়ে পেকিং জাতের হাঁস পালনে গ্রামের অস্বচ্ছল নারীদের সাবলম্বি করতে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পল্লী কর্ম- সহায়ক ফাউন্ডেশন। অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে পালন করেও লাভবান হচ্ছে। কারিগরি সহযোগিতায় কাজ করছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি নামের বেসরকারি সংস্থা। নারীদের পাশাপাশি বেকার যুবকেরাও এগিয়ে আসছে এ জাতের হাঁস পালনে। ।
গাংনী উপজেলার রাইপুর গ্রামের আক্তারুল ইসলামের স্ত্রী রিনা খাতুন বলেন, আমার অভঅবের সংসার। স্বামীর রোজাগরের টাকায় সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হতো। ছেলে মেয়েদের হাতে দুএক টাকা দিতে পারতাম না। পরে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির লোকজন আমার দুরবস্থা দেখে পেকিং জাতের হাঁসের বাচ্চা দেয় এবং তা পালনের জন্য বিভিন্ন উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা করেন। আমার বাড়িতে এখন ৩৫টি পেকিং জাতের হাঁস রয়েছে। এ হাঁস পালনে পানির প্রয়োজন হয়না। এই জাতের হাঁস পালনের বিশেষ বৈশিষ্ঠ হচ্ছে, এই জাতের হাঁস দ্রত বর্ধনশীল। দুই মাসে প্রায় ৩ কেজি ওজন হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম এবং মাংস সুস্বাদু। প্রাকৃতিক জলাশয়ের প্রয়োজন পড়েনা পাশাপাশি স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভ। এখন আমার সংসারের টুকিটাকি খরচ আমি নিজেই হাসের ডিম ও মাংস বিক্রি করে করতে পারি।
বেতবাড়িয়া গ্রামের মিনুয়ারা খাতুন বলেন, বাড়িতেই পেকিং হাঁস পালন করি। কোন সসম্যা হলে সংস্থার পাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে জানায়। তিনি আমাদের সার্বিক সহায়তা দেন। সংস্থার কাছ থেকে বিনামূল্যে পেকিং জাতের হাঁসের বাচ্চা দিয়েছিল। হাঁস ও ডিম বিক্রি করে আমার সংসারের অনেক স্বচ্ছলতা এসেছে।
তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর জাকিরের স্ত্রী সাথিয়ারা জানায়, স্বামীর রোজগারে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগানো খুবই কষ্ট হতো। এখন আমার বাড়িতে ৩৫টি পেকিং জাতের হাঁস পালন করি। প্রতিদিনই প্রায় সব হাঁসেই ডিম দিচ্ছে। ডিম বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া খরচ ও পোশাক কিনে দিতে সমস্যা হচ্ছেনা। আমার হাত খরচের টাকাও আর স্বামীর কাছ থেকে নিতে হয়না। আমার সংসারে অনেকটাই আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। তবে বানিজ্যিক ভাবে খামার করার চেষ্টা করছেন উপকারভোগী নারীরা।
জানা গেছে, সারা দেশে সমন্বিত কৃষি ইউনিট ভুক্ত প্রাণিসম্পদ খাতের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পিকেএসএফ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে পেকিং প্রজাতির হাঁস পালন প্রকল্পটি চালু করে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)।
কর্মসূচির আওতায় গাংনী উপজেলাতে খামারীদের স্বল্প সময়ে মাংস ও ডিম উৎপাদনে ব্রইলার টাইপ পেকিং হাঁস পালন বিষয়ক ৬৩ টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে। এছাড়াও খামারিদের মাঝে পেকিং হাঁস পালনের প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি খামারিদের পেকিং হাঁস পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, খামার দিবস, পরামর্শ কেন্দ্র এবং ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি (পিএসকেএস)। এ প্রকল্পের আওতায় শতাধিক অস্বচ্ছল পরিবার এখন আর্থিক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পলাশীপাড়া পিএসকেএস এর নির্বাহী পরিচালক মুহা: মোশাররফ হোসেন বলেন, পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি চাহিদা পুরুনে পেকিং জাতের হাঁসপালন প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করছি। এতে অনেকের সংসারে স্বচ্ছলতা আসছে। খামারী পর্যায়ে পেকিং জাতের হাঁস পালনে গ্রামের অস্বচ্ছল নারীদের সাবলম্বি করতে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পল্লী কর্ম- সহায়ক ফাউন্ডেশন। অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে পালন করেও লাভবান হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া মানুষকে আর্থিক স্বচ্ছলতায় সক্ষম করতে আমাদের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছা: নাসিমা খাতুন বলেন, আমাদের সমাজে অনেক পরিবার আছে যারা অনেক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে সংসার চালায়। তাদের আমরা সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখি করে সাবলম্বী করে তুলছি। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংস্থাও নারীদের কর্মমুখী করতে নানা কর্মসুচি হাতে নিয়েছে। তেমনি একটি সংস্থা পিএসকেএস। পেকিং জাতের হাঁস পালন করে অনেক নারীরা তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে। অনেকেই এখন সংসারে আত্ননির্ভরশীল হচ্ছে।