সারা দেশের মত মেহেরপুর জেলায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও পৌর সভার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত পৌর এলাকায় মশক নিধন ওষধ ছিটানোসহ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে মেহেরপুর ও গাংনী পৌর এলকায় দিন দিন বাড়ছে মশার উপদ্রব। সকাল কিংবা রাত মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে জনগণের কয়েল ও মশারিই ভরসা। পৌর নাগরিকদের অভিযোগ ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়লেও পৌর কর্তৃপক্ষের নজর কম। অন্যদিকে বৃষ্টির পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারনে সন্ধ্যার পর থেকে মশার উপদ্রব বেশী বলে জানান তারা।
মেহেরপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলেছে। তবে ডেঙ্গু সতর্কতায় নেই কোনো প্রচার-প্রচারণা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। স্থানীয় জনপ্রতিনিদের মধ্যেও নেই আগাম সতর্কতার জন্য পদক্ষেপ। শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই ঝোপঝাড় ও অপরিষ্কার নর্দমা। এসব স্থান অনেকটাই মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ধরা যায়। স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো প্রচার-প্রচারণা ও চালাচ্ছে না। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ে কোন বাজেট না থাকায় পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে চলছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফগার মেশিন দিয়ে কিটনাশক স্প্রে। ডেঙ্গু আক্রান্তের বেশীর ভাগ রোগী ঢ্কাায় অবস্থান কালীন সময়ে আক্রান্ত হয়ে মেহেরপুরে এসেছেন। বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে শতাধীক ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত আছে।
৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত মেহেরপুর পৌরসভা। বেশীর ভাগ এলাকায় দিন দিন বাড়ছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলা কিছুটা কম থাকলেও সন্ধার পর থেকে বাড়তে থাকে মশার উপদ্রব। মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে পৌর নাগরিকদের কয়েল ও মশারি ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। সময় মত মশক নিধন কার্ষাক্রম ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যাবস্থায় নিয়ন্ত্রনে আনা যায়না মশা। পৌর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারন নাগরিকদের আরো সচেতন সহ পরিস্কার পরিচ্ছনতা থাকলে নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে ডেঙ্গু। অন্য দিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধসহ মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।
মেহেরপুর পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ডের বাছিরন নেছা বলেন, আমরা মশার অত্যাচারে ঘুমাতে পারছিনা। মশার জালায় ৫ মিনিট থাকতে পারছিন। বাড়িতে বাইরে কোথাও থাকা যাচ্ছেনা মশার অত্যচারে। এসব ড্রেনের মশা। ড্রেন পরিস্কার করা হয়না যে।
পৌর সভার আরেক নাগরিক হুমাইয়ারা খাতুন বলেন, সন্ধ্যায় মশার বেশী কামড়াচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ। মশার কয়েল আর কত কিনবো। আমরা ভোট দিয়ে পৌরসভার মেয়র বানিয়েছি। তাদের তো উচিৎ আমাদের সুযোগ সুবিধা দেখার।
মেহেরপুর হালদারপাড়ার সখিনা বলেন, মশার কামুড়ে কোনো যায়গায় দাঁড়াতে পারছিনা। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই কামড়াচ্ছে। ড্রেন পরিস্কার করা হয়না। যেকারনে মশার উপদ্রপ দিন দিন বাড়ছে। পৌরসভার মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তিনি যেন নিয়মিত ড্রেন পরিস্কার করেন।
মেহেরপুর ২৫০ শষ্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, মেহেরপুরকে এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জন ডেঙ্গু পজেটিভ রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে ১৯ জন এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ৬ জন রোগী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য মেহেরপুর হাসপাতাল একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু সনাক্তরকরণ কীট এন এস ওয়ান, আইজিএম, আইজিজি কীট দিয়ে সরকারি নির্ধারিত মুল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু একটি এডিশ মশা বাহিত রোগ। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ একা কাজ করে পারবেনা। এজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মেহেরপুর পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে মন্ত্রানলয় থেকে আমাদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। সেই মতে পৌরসভা কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি কাউন্সিলরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডের মানুষকে সচেতন করার জন্য। সচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করছি। পৌর সভার পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্নতা বাড়িয়েছি। এছাড়া নাগরিকদের বলা হয়েছে নিজ নিজ বাড়ির চারপাশ পরিস্কার রাখতে। মশার লাভা ও ডেঙ্গুর লাভা নিধনে কিটনাশক প্রয়োগ সহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। পৌর এলাকায় নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে।