মেহেরপুরে দফায় দফায় ভারি বর্ষণে হাজার হাজার হেক্টর ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত কয়েক দিনে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পুনরায় অতি বৃষ্টির কারনে বেড়েছে পানি। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তবে পানি বৃদ্ধি না পেলে আমন ধানের জন্য উপকার হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
যদিও স্থানীয় হিসেবে এর পরিমান আরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে ধান, সবজি ও রবিশষ্যের জমির পরিমান বেশি। এর মধ্যে ফরিদপুরের অন্যতম ফসল কলা ও আগাম বাঁধাকপি রয়েছে। সদর উপজেলার বুড়িপোতা, পিরোজপুর, আমদহ, মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর, মোনাখালি ও বাগোয়ান, গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, কাজিপুর ইউনিয়নে ক্ষতি হয়েছে সব থেকে বেশি। অপেক্ষকৃত নিচু এলাকা ও ভারতীয় পানিতে ডুবছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসি।
গাংনীতে সম্প্রতি মেহেরপুর-২ আসনের সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকন এর উদ্যোগে বিভিন্ন বাঁধ অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলেও খুব একটা লাভ হয়নি চাষিদের।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রাম দিয়ে মাঠের ভিতর ঢুকছে ভারতীয় জলাঙ্গী নদীর পানি। একদিকে ভারতীয় পানির চাপ অন্যদিকে ভারি বৃষ্টি এতে মাস খানেক ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে কয়েক হাজার হেক্টর ফসল। এর মধ্যে আছে ধান, কলা, কচু, মরিচ, বাঁধাকপি সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি।
ইউনিয়নের হরিরামপুর ও চুঁচুখোলা বিলের পানি বৃদ্ধি ও ভৈরব নদের পানি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হওয়ায় মাঠের পানি বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই। ফলে পানির নিচে থেকেই নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। এদিকে ফসল নষ্ট হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে দ্বিগুন।
সম্প্রতি মেহেরপুরের এক আসনের সাংসদ ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মেহেরপুরের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, দারিয়াপুর ও বুড়িপোতা ইউনিয়নের মাঠের ভিতর দিয়ে যে বিলটি আছে সেটি পুন:খনন করা হবে। যাতে করে বন্যায় ফসলের কোন ক্ষতি না হয়। খাল খনন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।
ইদ্রিস, আহম্মদ আলী, রুহুল আমীন, আলমগীর সহ বেশ কয়েকজন চাষি জানান, এ বছর বৃষ্টির চাপ বেশি। অন্যান্য বছরে বর্ষার সময় ফসল ডুলেও অল্প দিনের মধ্যেই সেটি আবার জেগে যেতো। কিন্তু ভারতীয় পানি ও অতি বৃষ্টিতে এবার পানি বের হচ্ছে না। মাঝে একটু স্বাভাবিক হলেও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবারও পানির নিচে চলে গেছে ফসল।
শাহিন রেজা নামের এক মৎস চাষি জানান, প্রায় দুই লক্ষ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। পুকুরে বাঁধ দেওয়া থাকলেও গত সোমবারের ভারি বর্ষনে বাঁধ ভেঙে গেছে।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান শাহজামান চৌধুরী বলেন, আমরা ইউনিয়নের একদিকে ভারত বেষ্টিত। ভারতীয় জলঙ্গী ও সীমানা সংলগ্ন মরগাঙ্গী খালের পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ১৭ ভাগ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। বিষষটি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুর ১ আসনে সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন কে জানানো হয়েছে। তিনি আশ^াস দিয়েছেন পনি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনা করে এ বছরেই পানি নিষ্কাশনের সু ব্যবস্থা করা হবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, এ বছর সারা দেশেই বন্যার প্রকোপ বেশি। সে তুলনায় মেহেরপুরের অবস্থা মোটামুটি ভালো। তারপরও আমরা ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছি। ক্ষতি পুসিয়ে নিতে সরকারি ঘোষনা মোতাবেক সহজ শর্তে লোন সুবিধা পাই সেজন্য সহযোগীতা করা হচ্ছে।