মেহেরপুরে হটাৎ করেই আবারো বেড়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা। সীমান্ত এলাকায় দু-দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে জেলা তিন উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে মাদকের বড় বড় চালান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যঘেষা মেহেরপুরের তিন উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ফেন্সিডিল, গাঁজা, অফিসার্স চয়েজ মদ, পাতার বিড়ি, হেরোইন ও সল্প পরিমাণে ইয়াবা। তবে এইসব মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে ফেন্সিডিল। পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, বিজিবি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের মাদক বিরোধী অভিযানে কিছু মাদকসহ বহন কারীরা ধরা পড়লেও মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মেহেরপুর জেলার তিনটি উপজেলা। তিনটির তিন দিকেই ভারত বেষ্টিত। মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের পরেই ভারতের তেহট্ট, বেতাই মুজিবনগর উপজেলার পরেই ভারতের পাথরঘাটা, হৃদয়পুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের পরেই ভারতের দারেমার্থ, জামশেরপুর, মরুতিয়া, তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সহড়াতলার সীমান্তের ওপারে ব্রজপুর মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুট হিসেবে চিহ্নিত।
ইতোমধ্যে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানে কয়েকটি বড় চালান ধরাও পড়েছে। মাদক ব্যবসায়ীর উভয়পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নিহতও হয়েছে। মেহেরপুর প্রতিদিন এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে গত ১ মাসে ডজন খানেক মাদকের ছোট ব্যবসায়ী ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। সেই সাথে বিপুল পরিমাণ উদ্ধার করা হয়েছে ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও মদ।
মেহেরপুরের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে না হতেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। শহরের বেশ পরিত্যক্তবাড়ি, কলেজের আশে পাশের ঝোপ ঝাড়ে দেখা যাচ্ছে মাদকের বিস্তার। এছাড়াও সম্প্রতি একশ্রেণীর মাদক সেবি ব্যথা নাশক টাপেন্টা ট্যাবলেট গ্রহণ করছে নেশার জন্য। বিভিন্ন ফার্মেসীতেও সহজেই মিলছে এইসব অবৈধ ট্যাবলেট। সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসা এসব মাদক মেহেরপুর হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেহেরপুর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বড় বড় জেলাতেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়েছে কয়েকজন ক্ষমতাসিন দলের অঙ্গসংগঠনের নেতারাও। বিভিন্ন কায়দায় চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা ব্যবসা।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জুলফিকার আলী এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অবস্থান কঠোর। আমরা মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাদক সেবিদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সন্দেহজনক ব্যক্তিকে মেশিনের মাধ্যমে সাথে সাথে পরীক্ষা করে প্রমান পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও মাদকের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাদকের একজন মূলহোতাকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে আছে।
মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলী বলেন, বর্তমান আইজিপি স্যার আসার পরে মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পুলিশি তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই মাদক নির্মূলের একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে আরো কয়েকটি বিভাগ আছে যেমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি, র্যাব সবাই একযোগে কাজটা সমন্বয় করে শুরু করতে যাচ্ছি। এছাড়াও তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যদেরও ডোপ টেস্ট করা হবে। যারা মাদকাশক্ত ধরা পড়বে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া বিজিবি কমান্ডার লে. কর্ণেল ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিজিবির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা চাইলে কাউকে আটকিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনা। আমরা আসামি ধরার পর সেটা মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করি। পরের ব্যবস্থাটা তারা গ্রহণ করে। এজন্য হয়তো আমরা মূলহোতাদের ধরতে পারছি না। এছাড়াও সীমান্তে মাদক চালানের সময় দেখা যাচ্ছে রাতে মাঠের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা অভিযান চালালে মাদক ফেলে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আসামি ধরা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে সবসময় এমন হচ্ছে তা না। আমরা আগের চেয়েও বেশ সক্ষম।