মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম থেকে সরবরাহকৃত সূচিপত্র ছেঁড়া ইনফরমেশন স্লিপ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন জেলার জমি সংক্রান্ত মামলার বাদি, বিবাদি ও আইনজীবীরা। প্রায় দুই বছর যাবৎ ম্যাপ সরবরাহ করা হচ্ছেনা রেকর্ডরুম থেকে। খতিয়ানের জাবেদা, নকল, পর্চাসহ জমির হালনাগাদ তথ্যের কাগজপত্র নিতে গিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
ইতোমধ্যে মেহেরপুর জেলা আইনজীবি সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ সমস্যার সমাধান চেয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর এক লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদন তিনি বলেন, আদালতের অধিকাংশ মোকাদ্দমা জমি সংক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই বিচারপ্রার্থী জনগনের প্রয়োজনে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম থেকে খতিয়ানের জাবেদা নকল, ইনফরমেশন স্লিপ ও ম্যাপের প্রয়োজন হয়। বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ করা যাচ্ছে যে, রেকর্ডরুম থেকে সরবরাহকৃত অধিকাংশ ইনফরমেশন স্লিপে সূচিপত্র ছেঁড়া উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এর আগে ২/৩ দিনের মধ্যে খতিয়ান ও ইনফরমেশন স্লিপ পাওয়া যেতো। কিন্তু ইদানিং ১০/১৫ দিনেও সেটা পাওয়া যাচ্ছেনা। এর ফলে বিচার প্রার্থী জনগণের সেবা প্রদানে বিলম্ব ও ন্যায় বিচারেও বিলম্ব হচ্ছে। জেলা রেকর্ডরুম থেকে অঘোষিতভাবে ২ বছর যাবৎ জমির ম্যাপ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। যার কারনে, জমি সংক্রান্ত সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে খতিয়ানের পাতা ছেঁড়া বন্ধকরণসহ ইনফরমেশন স্লিপ, খতিয়ান ও ম্যাপ দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
গাংনী উপজেলার ধর্মচাকী গ্রামের ভূক্তভোগী লিটন আলী জানান, আমি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের রেকর্ড কিপারের কাছে গিয়ে ঘুরে এসেছি। জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম এখন ভোগান্তির অপর নাম। সূচিপত্র ছেঁড়া ইনফরমেশন স্লিপসহ অন্যান্য কাগজপত্র তুলতে গেলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এছাড়া ছেঁড়া কাগজপত্র হওয়ায় জমির আরএস, সিএস, এসএ রেকর্ড ও ওয়ার্কিং ভলিউমে হালনাগাদ কোনো তথ্য ঠিকমত থাকছেনা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জমির এইসব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছেঁড়া হওয়ায় ঝামেলাপুর্ণ জমি নিয়ে মালিকরা মামলা মোকদ্দমা করতে পারছেনা। এছাড়া রেকর্ডবিহীন জমি রেজিস্ট্রিও করতে পারছেনা। একজন জমি ক্রেতা জমি কেনার সময় আরএস, সিএস, এসএ দাগ দেখতে চাইবেন। ইনফরমেশন স্লিপে ছেঁড়া সূচিপত্র থাকায় জমির হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছেনা।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের ঘরের কাগজপত্র ঠিক করে রাখার দায়িত্ব সরকারী লোকজনের। কিন্তু সরকারী ঘরের সেই কাগজপত্র ছিড়ছে কিভাবে? এর জন্য দায়ী কারা ? এই জবাব কে দেবে ?
সুচিপত্র ছেঁড়া উল্লেখ করে ইনফরমেশন স্লিপ দেওয়ায় অনেক সময় আরএস রেকর্ডের এসএ দাগ ও খতিয়ানের হালনাগাদ তথ্য জানা যাচ্ছেনা। সাবেক এবং হাল নাগাদ তথ্য না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন জেলার হাজার হাজার জমি সংক্রান্ত মামলার বাদি বিবাদি উভয়ে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন মাঝে মধ্যে অফিসের পিওন বা নিম্ন কর্মচারীর সাথে গোপনে যোগাযোগ করলে কোনো কোনো সময় সঠিক কাগজটিও পাওয়া যায়।
মেহেরপুর জজকোর্টের অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ে ইনফরমেশন স্লিপ, খতিয়ান, পর্চা, ম্যাপ সরবরাহের জন্য আবেদন নিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করেনা।
জমিতে এসএ কিভাবে হলো এই তথ্য আগে রেকর্ডরুমের ওয়ারিকং ভলিউম থেকে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু সেটা এখন বন্ধ করে দিয়েছেন রেকর্ডরুম। অন্যজেলাতে এসব তথ্য দিলেও মেহেরপুর জেলায় বন্ধ। অফিসের লোকজনের কাছে জানতে চাইলে অফিসের লোকজন ববলেন স্যার তালাবদ্ধ করেছেন।
মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান বলেন, একজন আইনজীবির দেওয়া একটি পিটিশন আইনজীবি সমিতি পেয়েছে। এবিষয়ে ইতোমধ্যে সমিতির নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসংক্রান্ত একটি রেজুলেশন করা হয়েছে। আমরা সমাধান চেয়ে সামনে রবিবার আইন মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানোর পাশাপাশি মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সাথেও কথা বলবো। তিনি বলেন, সরকার ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য তাগিদ দিলেও পাতা ছেঁড়া ইনফরমেশন স্লিপ, খতিয়ান ও ম্যাপ দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ না করায় মামলাগুলো দ্রুত রায় পাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়া নতুন কোনো মামলাও ফাইলিং করা সম্ভব হচ্ছেনা।
মেহেরপুর রেকর্ডরুমের দায়িত্বরত সহকারী কমিশনার মাশতুরা আমিনা বলেন, রেকর্ডরুমের কাগজপত্র ও ইনফরমেশন স্লিপ অনেক পুরানো হওয়ার কারণে ছেঁড়া সূচিপত্র হতে পারে। আবার ছেড়া সুচিপত্রের কারণে রেকর্ডের পূর্বের বা হালনাগাদ, এসএ দাগ ও খতিয়ানের তথ্য পাওয়া যাবেনা এমনটি নই। সূচিপত্র ছেঁড়া থাকলেও সেটা জানা সম্ভব। হালনাগাদ বা পূর্বের দাগ নং অনলাইনেই সব সেবা পাওয়া যাবে। আবেদন করে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে দেরি হচ্ছে এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি এখানে অল্প সময়কাল দায়িত্বে এসেছি। আমার সময় কেউ ভোগান্তিতে পড়েনি। এছাড়া কোথাও সেবা নিতে এসে কেউ ভোগান্তিতে পড়লে আমাকে সরাসরি জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনলাইনে আবেদন করলে ম্যাপ সরাসরি ঢাকা থেকে সরবরাহ করা হয় বলেও জানান তিনি।