শীতের আগামনীতে কৃষিনির্ভর মেহেরপুরে স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। সপ্তাহ ব্যবধানে শিম, বেগুন, করলা, মুলা ও পালং শাকের মতো অনেক সবজির দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। শুধু এগুলো নয়, অধিকাংশ সবজি দামই কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে বাজারে সবজির আমদানি বেশি হওয়ায় কমেছে সবজির দাম।
তবে চাষিদের কপালে আশঙ্কার ছাপ সুস্পষ্ট। তারা বলছেন, শীত পড়াতে সবজি উৎপাদন বেড়ে গেছে সত্যি, কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে ঢাকায় সবজি পাঠাতে না পেরে কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে লোকশান গুনতে হবে তাদের।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, বছরের সবসময়ই সবজির দাম বেশি থাকলেও শীত আসলে সবজির দাম নাগালের মধ্য আসে।
জেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী বাজারের সবজি বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী, চাষি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে শুক্রবার বামন্দী সবজি বাজারে ব্যাপক পরিমাণে সবজি আমদানি হয়েছে। শীতকালীন সবজিতে সবজি বাজার ভর্তি হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মুখে হাসি থাকলেও এ সময় চাষিদের মুখ ছিল কিছুটা মলিন। তারা জানান, গত সপ্তাহে যেখানে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৬০ টাকায়, শুক্রবার তা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমেছে। বেগুন ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আজ তা ১৫ থেকে ২০ টাকা; পটল ছিল ৫০ টাকা, আজ তা চলছে ১৫ থেকে ২০ টাকা; মুলা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আজ তা ১৫ থেকে ২০ টাকা; পালং শাক ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, আজ তা ২০ টাকা এবং প্রতি কেজি লালশাক বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা করে, আজ তা চলছে ১৮ টাকা করে।
সবজি বিক্রেতা তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি চাষিদের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে বেগুন কিনে বিক্রি করেছি ৫০ টাকায়; আজ কিনেছি ১৫ টাকা করে, বিক্রি করছি ২০ টাকা করে। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে আজ ক্রেতাদের চাহিদাও অনেক বেশি।’
আরেক সবজি বিক্রতা আরিফুল বলেন, ‘বাজারে আজ অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ১৫ টাকা করে কম। কারণ বাজারে আজ প্রচুর সবজির আমদানি হয়েছে। ফলে দাম কমে গেছে। আর যখন যেমন দামে সবজি কিনি, তখন তেমন দামে বিক্রি করি। বাজারে মূলত সবজি দাম বাড়ে উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে।’
সবজি ক্রেতা শিহাবুল আলম বলেন, ‘আমি আজ থেকে ১৫ দিন আগে আধা কেজি শিম কিনেছি ১০০ টাকায়, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি কিনেছি ৬০ টাকা, আর আজ এক কেজি শিম কিনছি ৩৫ টাকা করে। তার মানে অর্ধেক দামে। আজ বাজারে শীতকালীন প্রায় সব সবজিই উঠেছে।’
ক্রেতা উজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি রাজ মিস্ত্রির কাজ করি। সকাল থেকে বিকেল পযর্ন্ত কাজ করে প্রতিদিন ৬ শ’ টাকা রোজগার করি। বাজারে এসে দুই একটা সবজি ছাড়া কেনার ক্ষমতা থাকে না। আজ এসে ২ শ’ টাকার বাজার করেছি, তাতেই বাজারের ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেছে। আজ বেগুন, শিম, মুলা, পটল, বাধাকপিসহ আরও কয়েকটি সবজি কিনেছি। এমন বাজারদর থাকলে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুব ভালো হয়।’
সবজি চাষি মধু বলেন, ‘আজ বেগুন পাইকারি বিক্রি করলাম ১২ থেকে ১৫ টাকা করে। বতর্মানে সার, বিষ, শ্রমিকসহ সব জিনিসের দাম বেশি। এখন সবজি চাষে আগের থেকে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। আজ যে দামে সবজি বিক্রি করলাম এমন চলতে থাকলে লোকশান গুনতে হবে।’
আরেক সবজি চাষি একরামুল বলেন, ‘গত সপ্তাহেও সবজির দাম বেশ ভালো ছিল। অথচ আজ তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি বিক্রি করতে যাচ্ছি, তারা সবজির দাম কম বলছে। অথচ ঢাকার পার্টি বাজারে আসলেও তারা এখন এ সবজিই বেশি দামে কিনতে চাইবে। হরতাল অবরোধের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা না আসায় এমনটি ঘটেছে।’