আকতারুজ্জামান, মেহেরপুর
তথ্য প্রবাহের যুগে জেলায় সাংবাদিকতায় পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও নারীরা অনেকাংশে পিছিয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানী ও নারী সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকদের অগ্রনী ভূমিকা থাকলেও সম্মানী না থাকা এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ায় কেউ আসতে চাইছেন না এ পেশায়। সাংবাদিকতায় নারীদের সম্পৃক্ততা থাকার খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন মেহেরপুরে গণমাধ্যমে কর্মরত বিশিষ্ট জনেরা।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ছাড়াও প্রায় ৪৪ টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন রয়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় কাগজ রয়েছে কয়েক হাজার। এসব চ্যানেল ও পত্রিকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পুরুষদের পাশাপাশি নারী সাংবাদিকদের অংশ গ্রহণ থাকলেও মেহেরপুরে নারী সাংবাদিক রয়েছে মাত্র দু’জন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দিলরুবা খাতুন ও এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজে কাজ করছেন ফাতেমা উম্মে রোজিনা। বিভিন্ন চ্যানেল ও পত্রিকা রয়েছে পুরুষ সাংবাদিকদের দখলে। ঝুকিপুর্ণ পেশা ও নুন্যতম সম্মানী না পাওয়ায় অনেকেই এ পেশায় আসতে চাইছেন না বলে জানিয়েছেন অনেকে।
মেহেরপুরের সাংবাদিক দিলরুবা খাতুন বলেন, তিনি ২০০৫ সালে শখ করেই সাংবাদিকতায় আসেন। আস্তে আস্তে তার ভাল লাগার জায়গা থেকে আজ অবদি কাজ করছেন তিনি। তবে তিনি কাউকে এ পেশায় উদ্বুদ্ধ করতে চাইছেন না কারন হিসেবে তিনি জানান, একজন সাংবাদিকের ন্যুন্যতম সম্মানী মিডিয়া হাউজগুলি দিতে চাননা। ফলে নারীরা এপেশায় এসে হাত খরচের টাকার জন্য পরিবারের কাছে হাত পাততে হবে। শুনতে হবে নানান কথা। মিডিয়া হাউজগুলো যদি শহরের মতো মফস্বলের সাংবাদিকদেরও সম্মানীর ব্যবস্থা করে তাহলে শুধু মেহেরপুর নয় সবখানে নারীরা এ পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ হবেন।
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজে কর্মরত মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি উম্মে ফাতেমা রোজিনা জানান, পারিবারিক ভাবে তিনি সাংবাদিকতায় এসেছেন। মেহেরপুরের মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও মেহেরপুরের উন্নয়ন এবং সম্ভাবনাসহ সকল ঘটনা সকলের মাঝে তুলে ধরতে পেরে তিনি পরিতৃপ্ত। তিনি সাংবাদিক পরিবারের সন্তান। পরিবারের লোকজন এ পেশার গুরুত্ব বোঝেন তাই কাজ করতে কোন সমস্যা হয় না। প্রথমে শখের বতবর্তী হয়ে এ পেশায় আসলেও এখন নেশা হয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, পারিপার্শিক ও পারিবারিক ভাবে নারীরা এ পেশায় আসতে চাইনা। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং আর্থিক যোগান না থাকায় নারীদের ভুমিকা কম বলে জানান এ নারী সাংবাদিক।
ঢাকায় কর্মরত কয়েকজন সিনিয়র নারী সাংবাদিক বলেন, জেন্ডার বৈষম্য ও অসমতা বিদ্যমান। সংবাদ ব্যবস্থাপনায় নারী নেতৃত্বের অভাব রয়েছে,অনলাইন অফলাইন, দুই ক্ষেত্রেই নারী সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হতে হয় । নারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে বাস্তব সমস্যা অনেক । যৌন হয়রানি, নিপীড়ন ও বৈষম্য প্রতিরোধে নীতিমালার অভাব জেন্ডার সমতা অর্জনের জন্য সক্রিয় উদ্যোগ ও তার প্রয়োগ প্রয়োজন এবং তাতে উত্তমচর্চা ও উন্নতমান নিশ্চিত করা হলে মফস্বলেও নারী সাংবাদিকতায় অনেক নারী অংশগ্রহন করবে।
গাংনী পেস্রক্লাবের সভাপতি ও মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোঃ রমজান আলী বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশা প্রসারিত হলেও পুরুষদের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহন একেবারেই কম। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা,কাংখিত পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক চাপ, অন্যান্য পেশার তুলনায় অনেক ঝুঁকি বলে মনে করেন নারীরা। এছাড়াও নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্রের অভাব, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য ও যৌণ হয়রানীর মত অনেক কারনেই মফস্বলে নারী সাংবাদিক হাতে গোনা কয়েকজন। উপযুক্ত পরিবেশ. সংবাদপত্রে কর্মরত অবস্থায় আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করলে নারীরা অন্যান্য পেশার মত সাংবাদিকতা পেশায় এগিয়ে আসবে।
মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব চান্দু বলেন, সাংবাদিকতা একটি স্বাধীন পেশা,এ পেশায় অংশগ্রহন করতে হলে পরিবারের স্বীকৃতি জরুরী। সাংবাদিকতায় আসার যে অনুপ্রেরনা বা অনুমোদন তা শিক্ষিত নারীরা পাচ্ছেনা, ফলে মেহেরপুর জেলায় নারী সাংবাদিকতায় ভাটা পড়েছে। এছাড়াও নারী সাংবাদিকদের উদ্বুদ্ধকরনে বিভিন্ন নারী সাংবাদিকদের উন্নয়নে যে সংগঠনগুলি কাজ করছে তাদের সমন্বয়হীনতারও ঘাটতি রয়েছে। নারী সাংবাদিক না থাকায় প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা বা তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগী নারাীরা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও মনে করেন এ সাংবাদিক।
মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, মেহেরপুরে নারী সাংবাদিকতা পরিবেশ না থাকা এবং পারিপার্শ্বিক ভাবে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রেও ঘাটতি রয়েছে। সিংহভাগ মিডিয়া হাউজে পুরুষ সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া রয়েছে । ফলে নারীরা এ পেশায় আসতে চাইলেও স্পেসের অভাবে অসতে পারছেনা। ইদানিং কয়েকটি অনলাইন নিউজে নারীদের দেখা মিলছে তবে তা একেবারেই কম। কয়েকজন নিয়োগ পেলেও কর্মক্ষেত্রে দেখা মিলছেনা।
লেখক,গবেষক দৈনিক কুষ্টিয়া ও দি কুষ্টিয়া টাইমস এর প্রকাশক ও সম্পাদক ড.আমানুর রহমান বলেন. অন্যান্য পেশার তুলনায় সাংবাদিকতা ঝুঁকিপুর্ণ পেশা । উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সহযোগীতার অভাব থাকায় মফস্বল জেলাগুলিতে নারী সাংবাদিকতার অংশগ্রহণ নেই। নারী সাংবাদিকতায় সেন্ট্রাল ভিত্তিক অনেক সুযোগ সুবিধা থাকলেও মফস্বলে নেই, যার ফলে নারীরা সাংবাদিকতা পেশায় আসতে চাচ্ছেনা। এছাড়াও মফস্বল এলাকার নারীরা অনেকাংশে সংসার মুখী। তাই এ পেশায় তারা বিমুখ।