স্থানীয় দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদককে হুমকি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ, দৈনিক জবাবদিহি ও আমাদের অর্থনীতির সাংবাদিকদ্বয়কে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও মায়ের হাসি ক্লিনিক মালিকের বিচার দাবীতে মানববন্ধন করেছেন জেলা সাংবাদিকরা।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘন্টাব্যাপী মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনের সড়কে সিনিয়র সাংবাদিক তোজাম্মেল আযমের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের অর্ধশত সাংবাদিক ও প্রজন্ম সুশীল সমাজের ব্যানারে একটি সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ও কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ইয়াদুল মোমিন, মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহাবুব চান্দু, বার্তা সম্পাদক জুলফিকার আলী কানন, গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইত্তেফাক প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, গাংনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুন অর রশিদ রবি, মাইটিভির গাংনী প্রতিনিধি মাসুদ রেজা, জবাবদিহির পত্রিকার প্রতিনিধি এ সিদ্দিকী শাহিন, আমাদের অর্থনীতির প্রতিনিধি মাসুদ রানা, প্রজন্ম সুশীল সমাজের প্রতিনিধি জি এফ জুয়েল, মাইটিভি প্রতিনিধি মাসুদ রানা, বার্তা মেহেরপুর প্রতিনিধি সাজিবুল হক প্রমুখ।
মানববন্ধনে বাসস প্রতিনিধি দিলরুবা খাতুন, বাংলাটিভি প্রতিনিধি আক্তারুজ্জামান, ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মর্তুজা ফারুক রুপক, জবাবদিহি প্রতিনিধি সিরাজুদ্দোজা পাভেল, আজকালের খবর প্রতিনিধি কামরুল ইসলাম, ভোরের কাগজের মুজিবনগর প্রতিনিধি শের খান, বার্তা মেহেরপুরের সম্পাদক রাশেদ্জ্জুামান, অধিকার প্রতিনিধি শাকিল রেজা, মেহেরপুর প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার শহিদুল ইসলাম, আবু রাইহান, কাথুলী প্রতিনিধি পলাশ আহমেদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি এস এম তারেক, সাংবাদিক শ্রাবন খান সোহানসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক মানববন্ধনে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু একজন দুর্নীতি পরায়ন ও ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলাসহ দেড় ডজন মামলা চলমান। এখনো আদালতে চলমান। কথায় কথায় মানুষকে হুমকী প্রদান ও মামলা করা মতুর প্রধান কাজ। এজন্য এই শহরে তাকে মামলাবাজ মতু হিসেবেই চেনে। সে মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার সীমানা নির্ধারণী মামলা করে একটানা ১৪ বছর পৌরসভার ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। তার উগ্র আচরণ মানুষকে সব সময় আহত করে। তার বিরুদ্ধে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মদদ দেওয়ারও অভিযোগ আছে।
প্রজন্ম সুশীল সমাজের প্রতিনিধি জি এফ জুয়েল বলেন, সাবেক মেয়র মতুর মেয়ে রুমানা হেলালী মাতৃসদনের ডাক্তার। সে কৌশলে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে মায়ের হাসি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে সিজার করেন। মেহেরপুরের ক্লিনিকগুলো যত সিজার হয়না, তার থেকে বেশি সিজা মায়ের হাসি ক্লিনিকে হয়। অবিলম্বে রুমানা হেলালীকে অপসারণ করতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী রফিকুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের সাথে যে ঘটনা মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু ঘটিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ইত্তেফাকের গাংনী উপজেলা প্রতিনিধি আমিরুল ইসলাম অল্ডাম বলেন, মায়ের হাসি ক্লিনিক নামে যে ক্লিনিক আছে সেখানে নানা অপকর্ম হওয়ার অভিযোগ আছে। মায়ের হাসি ক্লিনিকের নাম মায়ের হাসি বাদ দিয়ে মায়ের কান্না নাম দিলেই ভালো হয়। মায়ের হাসি ক্লিনিকের মালিক ১৪/১৫ বছর একটি পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তার এ ধরণের উগ্র আচরণ করা ঠিক নয়। সাংবাদিকরা নিউজের স্বার্থে ছবি তুলতেই পারে এটি তাদের কাজ।
সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ রবি বলেন, মেয়র মতু ১৪ বছর মেয়রগিরি করেছেন মামলাবাজি করে। উনাকে আমি মামলাবাজ হিসেবেই চিনি। আজ আমি উদাত্ত আহবান জানাই, তিনি মেয়র হওয়ার আগে কি পরিমাণ সম্পদের মালিক ছিলেন এবং মেয়র হওয়ার পর কি পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে তার হিসাব নেওয়ার জন্য।
মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ও কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ইয়াদুল মোমিন বলেন, মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু আপনাকে বলছি, কোন দুর্নীতিবাজ হুমকি দিয়ে সাংবাদিকের কলম থামাতে পারেনি। আপনিও পারবেন না। আপনার সকল অপকর্মের কথা মেহেরপুরের সকলে জানে। আপনার সম্পর্কে পত্রিকার মাধ্যমে মেহেরপুর মানুষ আরো জানবে।
মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহাবুব চান্দু বলেন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়, আমি অন্যায় করলে আমার তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। ঠিক তেমনি মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু আপনিও আইনের উর্ধ্বে নয়। তিনি দুদকের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আমারসহ সকল সাংবাদিকের সম্পদের হিসাব নেওয়ার আহবান জানান দুদকের প্রতি। একই সঙ্গে সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
মেহেরপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম বলেন, মেহেরপুরে অসংখ্যা সাংবাদিকদের মধ্যে যারা মানববন্ধনে আসতে পারেননি তাদের ধন্যবাদ। আপনারা সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতুর কাছে থেকে সুবিধা পেয়ে থাকেন সেটা আজ প্রমাণ করে দিলেন।