মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার স্থাপনা। দোকানপাট, রেস্তোরা, ওয়ার্কসপসহ গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বিপনীবিতান। এ যেন সরকারি জমি দখলের এক প্রতিযোগীতা। কোন কোন স্থাপনা মূল সড়কের উপরেই চলে এসেছে। স্থানীয় ক্ষমতাসিনদের খুশি করে চলছে এইসব দোকান পাট। শুধু দোকানপাটই না পুরানো গাড়ি, ইট, বালু, পাথরে সড়কের অধিকাংশ জমিই দখলে। সড়ক বিভাগ থেকে বার বার নোটিশ দেওয়া হলেও কর্ণপাত করেনা কেউই। অজানা কারণে সড়কের জমি দখলমুক্ত করার তেমন উদ্যোগও নেই সড়ক বিভাগের।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজের) কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণেই বেদখল হয়ে যাচ্ছে সওজের সরকারি জমি। ইতোমধ্যে সেখানেও তৈরি হয়েছে অবৈধ দখলবাজদের একটি ভুইফোড় সংগঠন।
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর মুজিবনগর, মেহেরপুর কাথুলী ভায়া গাংনী-হেমায়েতপুর পর্যন্ত রাস্তার দুপাশ দখল করে গড়ে তুলেছে দোকানপাট। এইসব সড়কের জমির মালিক সড়ক বিভাগ ও জেলা পরিষদ। তবে বেশ কিছু জমিতে জেলা পরিষদের উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে দোকানপাট। যে গুলো থেকে নিয়মিত ভাড়া তোলে জেলা পরিষদ কতৃপক্ষ। কিন্তু সড়ক বিভাগের জায়গায় রয়েছে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা। যাদের কোথাও কোন ধরণের ট্যাক্স বা ভাড়া দেওয়া লাগে না।
এইসব অবৈধ স্থাপনার কারণে চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। শামীম রেজা, তুহিনসহ বেশ কয়েকজন ট্রাকচালক বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও সওজ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে চলছে তাদের ব্যবসা। ২০১৪ সালের ১২ জুলাই কলেজ মোড়ে একটি যাত্রীবাহী বাস মোড় ঘুরতে গিয়ে আছড়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী হোটেলে। যেটি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল। এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪ জন, আহত হন আরও ৩৬ জন। এ কারণে সে সময় সড়কের ধারে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য একপ্রকার আন্দোলন করেন স্থানীয় অনেকেই। সওজ ও স্থানীয় প্রশাসন সে সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু পরবির্ততে পুনরায় আবার তৈরি হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা।
অবৈধভাবে দোকান চালানোদের মধ্যে ইমন স্টোরের মালিক ইমাদুল ইসলাম, ইসলামীয়া হোটেলের মালিক সামসুল ইসলাম, ইয়ারুল হোটেলের মালিক ইয়ারুল ইসলাম জানান পেটের দায়ে এখানে দোকানপাট তৈরি করেছি। বেচাকেনা করে আমাদের সংসার চলে। প্রশাসন নোটিশ দিয়েছে কিন্তু আমরা কেউই নোটিশের উত্তর দেইনি। এক্ষেত্রে তো আমাদের কিছুই বলার নেই।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তুষার কান্তি পরমাণি জানান, আমরা ইতোমধ্যে যে সব অবৈধ স্থাপনা আছে তাদের নোটিশ দিয়েছি। এছাড়াও প্রায় শতাধিক দখলবাজদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে।
সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকোশলী সুলতান মাহমুদ জানান, আমরা এইসব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেবো। খুলনা বিভাগীয় প্রকোশলী ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে এই অভিযানটা পরিচালনা করা হয়নি। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী সাহেবের সাথে আলোচনা করে আমরা অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বলেন, প্রধান সড়কের পাশে যেসব জমি আছে সেগুলো জেলা পরিষদেও পক্ষ থেকেই দেখভাল করা হয়। সেখান থেকে নিয়মিত ভাড়া তোলা হয়। কোন অবৈধ স্থাপনা জেলা পরিষদের জায়গায় নেই।