মেহেরপুর আদালতে প্রথম বারের মত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার শুনানী, উপস্থিতি এবং সাক্ষ্য গ্রহনসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে স্মার্ট বিচার বিভাগরে যাত্রায় নতুন মাত্রা সৃষ্টি করলেন এক জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট।
গতকাল বুধবার পৌনে ১২টা থেকে দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এস এম শরিয়ত উল্লাহ এর আদালত এই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত গেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এস আই আবুল হাসেম ২০২১ সালে মেহেরপুর সদর থানায় কর্মরত অবস্থায় মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নম্বর জে.আর.-২৯৭/২১ (রাষ্ট্র বনাম শ্রী পেনাতোশ গং)। বদলিসূত্রে বর্তমানে তিনি বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানায় এস আই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে ৪টি তারিখ তার সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য থাকলেও তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। এ কারনে মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছিলো। এ কারণে আদালত “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০” এবং চলতি বছরের ২০ আগষ্ট সুপ্রীম কোর্টের জারিকৃত প্রাক্টিস নির্দেশনার আলোকে ভিডিও কনফারেন্সেরর মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলার দুই আসামি শ্রী মনা হালদার ও শ্রী পেনাতোশ হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক এস এম শরিয়ত উল্লাহ।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: জাহাঙ্গীর জানান, ভিডিও কনফারেন্সে সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশটি এজাহারকারী ও সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে ইমেইলের মাধ্যমে জুম অ্যাপসের মিটিং এর তারিখ, সময়সহ বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া ই-মেইলে এজাহার, জব্দতালিকা সহ সংশ্লিষ্ট কাগজাদি প্রেরণ করা হয়েছিলো। আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ফলে মামলাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। অথচ এই সাক্ষীর জন্য মামলাটি দীর্ঘদিন পেন্ডিং ছিল।
মামলার সাক্ষী এস আই আবুল হাসেম বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণকালে আমি কোন সমস্যা অনুভব করিনি। আদালতে আমরা যেভাবে কাজ করি সেভাবেই এই সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত, পুলিশসহ সকলের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
মেহেরপুরের কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মানস রঞ্জন দাস বলেন, নি:সন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। পুলিশের অনেক কর্মকর্তারা বদিলজনিত কারণে সময়মত সাক্ষ্য দিতে আসতে পারেন না। এতে মামলা নিষ্পত্তি হতে বিলম্ব হয়। ডিজিটাল এ পদ্ধতির কারণে মামলা জট যেমন কমবে তেমনি সরকারি টাকার খরচও কমবে।
মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খ.ম হারুন বিন ইমতিয়াজ জুয়েল সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মামলার সাক্ষ্য গহণ করায় মামলা জট কমবে। এতে জনগণ উপকৃত হবে এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রিয় অর্থ ব্যয়ও কমবে। এ পদ্ধতিতে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা অব্যহত রাখার আহবান জানান তিনি।
মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের প্রাকিটস নির্দেশনা আদেশের বলে মেহেরপুরে প্রথম ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ শুনানী হলো। এর ফলে মামলার জট কমার পাশাপাশি সাধারণ জনগনও উপকৃত হবে।