বিএনপির প্রথম এবং শেষ ভাবনা সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল এবং জনগণের আকাংখা দল নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচন। মানুষের ভাত ও ভোটের রাজনীতি করছে মেহেরপুর জেলা বিএনপি। এমন কথা জানালেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন।
অপরদিকে মেহেরপুর জেলা বিএনপির অপর অংশের নেতা জেলা বিএনপির আলমগীর খান ছাতু বলেন, “মাসুদ অরুন, আমজাদ, আমজাদ ও মাসুদ অরুন” এই দু ব্যক্তিই মেহেরপুর জেলা বিএনপির বিগত ত্রিশ বছর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে আছেন। এই দুজনের বাইরে কখনো কেউ পদে আসতে পারেনি। এছাড়া শেষ কমিটির বয়স ১০ বছর হলেও এখন পর্যন্ত এই কমিটি ্একটি পরিচিত সভাও করতে পারেনি। তাছাড়া আমরা সংস্কার পন্থিদের বাদ দিয়েই বিএনপির রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে চাই।
মেহেরপুর জেলা বিএনপির রাজনীতি নিয়ে মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ নানা কথা তুলে ধরেছেন। বিএনপির বিভিন্ন স্তুরের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নিয়েই আজকের আয়োজন।
মেহেরপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলমগীর খান ছাতু বলেন, আমার সাথে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওমর ফারুক লিটন , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফয়েজ আহম্মেদ, যুগ্ম সাংগাঠনিক সম্পাদক কাজী মিজান মেনন, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি হুজাইফা ডিক্লার, জিয়া মঞ্চের জেলা আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ও জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী তাদের সাথে রয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
বিএনপির পেশাজীবি সংগঠন “শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের’ ভারপ্রাপ্ত মহামসচিব ও মেহেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য জাকির হোসেন বলেন, জেলা বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগীতা আছে। তবে, সংকটকালীন সময়ে বিএনপির সকল নেতাকর্মী এক সাথে কাজ করেন।
জেলা বিএনপির অফিস কেন্দ্রীক রাজনৈতিক কর্মসূটি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে কোনো কর্মসূচি পালনের জন্য অনুমতি নিতে গেলে তারা আমাদের অনুমতি দেয়না। বাধা দেয় সকল কর্মসূচিতে। তাই, আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কর্মসূচি পালন করা হয়ে থাকে। যেকোনো কর্মসূচিতে বাধা দেয়।
ভোটের আগে আপনাকে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়, বাকী সময়গুলোতে আপনাকে পাওয়া যায়না প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে থাকার কারনে স্থানীয় রাজনীতিতে আমি সময় দিতে পারিনি। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো নেতা না হলেও বিএনপির পেশাজীবি সংগঠনের ব্যানারে সারা বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
জাকির হোসেন বলেন, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে আমার নিজস্ব কিছু দর্শন আছে। সেই দর্শনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরের মানুষের জীবন মানের প্রকৃত উন্নয়ন সাধিত হবে। যা অতিতে কেউ এটা করে উঠতে পারেনি।
মেহেরপুর জেলা জিয়া মঞ্চের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে বিএনপির অংশ বিএনপির মুল আদর্শের সাথে নেই। যেই কারণে, মেহেরপুর জেলা বিএনপি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় যারা তৃণমুলের রাজনীতিতে আছেন তারা সব সময় একটা বেকায়দার মধ্যে থাকেন। বিএনপির সহযোগী সংগঠণ হিসেবে জিয়া মঞ্চের সাথে যারা রয়েছেন তারাও বিপদের মধ্যে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা আসলে সব কর্মসূচি এক সাথে করতে হয়। তখন তাদের নির্দেশেই মাসুদ অরুনের সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয়।
মেহেরপুর পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, জেলা বিএনপির কমিটিতে প্রায় ৩’শ নেতা কর্মী রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে ৫/৬ জন লোক এক সাথে চলে। এটাকে বিএনপির বিভক্তি বলা যায়না। বিএনপি তৃণমুল নেতাকর্মীর দল। স্থানীয় কর্মীরাই তাদের নেতা ঠিক করেন। মাসুদ অরুনের নেতৃত্বাধীনে জেলার হাজার হাজার লোক এক সাথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। গুটি কয়েক লোক নেতৃত্ব দিচ্ছে, সাথে কিছু খুচরা লোকজন আছেন। আমরা তাদের সেভাবেই দেখিনা।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আসলে তাদের আমরা ডাকি। তখন তারা আমাদের সাথে এসে কর্মসূচি পালন করে থাকেন। আলাদা করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার মত সক্ষমতাও তাদের নেই। তারা কোনো কর্মসূচিও পালন করে না। নিজেদের সক্ষমতা দেখাতেই ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই তারা গুটি কয়েক লোক এধরণের একটা পর্যায় সৃষ্টি করে রেখেছে। এটাকে বিএনপির মুল শক্তি পাত্তা দেইনা। বিএনপির জেলা কমিটির সাথে তৃণমুলের যেসব কমিটি রয়েছে সবাই এক সাথেই আন্দোলন সংগ্রামে আছে।
বিএনপি’র আগামী দিনের দাবী কি এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন বলেন, আমাদের এখন প্রথম ভাবনা সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল এবং জনগণের আকাংখা জাতীয় দাবি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে জাতীয় নির্বাচন।
তিনি বলেন, সরকারের আগ্রাসী দুর্নীতীর কারনে, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই এই দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা অথবা, তাদের স্ব ইচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে। আগামি তিন মাসের মধ্যে এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে বলেও জোর দাবী জানান তিনি।
ঘরের মধ্যে বা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে রাজনৈতিক সমস্ত কর্মকান্ড করা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা শুধু অফিসের সামনেই নয়, অফিসের বাইরেও অনেক প্রোগ্রাম কর্মসূচি করেছি। বিশেষ করে কাথুলি মোড় ও বিভিন্ন গ্রামে বিগত দিনে ৪/৫টি মিটিং মিছিল করেছি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি সরকারি দল তাদের রাজনৈতিক দুর্বলতা ঢাকতে প্রশাসনকে ব্যবহার করে শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক বরাদ্দ দেয়না।
মাসুদ অরুন বলেন, আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক। জনগণের ন্যায্য দাবী দাওয়া এবং সত্য উচ্চারণের পক্ষে এই প্রাঙ্গণ ব্যবহার করা সকলের অধিকার, এটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস আগামি দিনে উপলব্ধি থেকে সরকারি দল এবং প্রশাসন এই পার্ক ব্যবহারে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেনা।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও স্থানীয় দাবি দাওয়া নিয়ে মেহেরপুরের বিএনপি প্রতিনিয়ত স্বোচ্চার। জনগণের কাঙ্খিত লক্ষ্য সামনে রেখে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকারসহ চাল, ডাল, তেল, চিনি বিদ্যুৎ, গ্যাসের লাগামহীন মুল্য বৃদ্ধির এবং একটি গণতান্ত্রিক রাস্ট্র নির্মাণের জন্যই আমরা লড়ে যাচ্ছি।
এ কারণে গত ১৫ বছরে আমাদের জেলায় ২৭ জন নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, নির্যাতন ও বেআইনীভাবে গ্রেফতার হয়রানি ও কারা নির্যাতন করা হয়েছে। জনগণের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্ছিত করা হয়েছে।