মেহেরপুরে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। গত রবিবার সকাল থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৮ জন। এর মধ্যে ১৭ জনের শরীরে কলেরা জীবণু শনাক্ত হয়েছে।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪ দিনের ব্যবধানে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩২৪ জন। এসব রোগীদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩১ জন।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ নিপু আক্তার জানান, প্রতিদিনই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসছেন হাসপাতালে। রোগীদের অধিকাংশই পুরুষ এবং বয়সে তরুণ। ২৫ জন সেবিকা (নার্স) ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে নার্স এনে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তাই পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে আইইডিসিআরকে জানানোর পাশাপাশি নিয়েছেন বাড়তি ব্যবস্থা। তবে স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা ভাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে আইইডিসিআর থেকেও একটি টিম এসে ডায়রিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসের ২০ দিন যেতে না যেতেই বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছেন ১০০ থেকে ১২০ জনের কাছাকাছি রোগী। হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ১০ শয্যা সংরক্ষণ থাকলেও রোগীর সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালের তিন তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ডরমেটরিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রোগীদের জন্য সেখানেও সংকুলান হচ্ছেনা। ডরমেটরিতে স্থাপিত ওয়ার্ডের প্রতিটি রুমে ৪ জন করে ও হাসপাতালের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে গাঁদাগাঁদি, ঠাঁসা ঠাসি করে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
ডায়রিয়া আক্রান্ত আলমগীর হোসেন, নিগার নেছা বলছেন, হাসপাতাল থেকে স্যালাইনসহ বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া গেলেও বাইরে থেকেও কিছু ওষুধ কিনতে হচ্ছে। তবে নার্সদের সেবায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভিড়ে স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানালেন ডায়রিয়া আক্রান্ত ভর্তি রোগী মেহেরপুর শহরের তাতিপাড়ার ইফতি খাতুন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মোখলেছুর রহমান জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মেহেরপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লার বাসিন্দা। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলেই বাকিরাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এপ্রিল মাসে সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুর জেলাতেও ডায়রিয়াতে প্রচুর আক্রান্ত হয়েছিল। মাত্র ২০/২৫ দিনের ব্যবধানে আবারও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা অস্বাভাবিক।
আইইডিসিআর এর সহকারী মাঠ গবেষক রেজাউল করীম বলেন, আমরা মেহেরপুরসহ ২২ টি জেলাতে কলেরার গবেষণা কাজ করছি। গত চার দিনে হঠাৎ এ জেলাতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে কলেরার জীবাণু সনাক্ত হয়েছে। যা বাংলাদেশের কোনো জেলাতে হয়নি। বিষয়টি উদ্বেগজনক। তিনি বলেন যাদের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশই শহরের মধ্যে’র বাসিন্দা।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার জমির মো: হাসিবুস সাত্তার বলেন, ডায়রিয়া মূলত পানিবাহী রোগ। এছাড়া রাস্তার খাবার, বাসি-পচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। তবে ডায়রিয়া হবার মূল কারণ দূষিত পানি। খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য পানিও হতে হবে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ।