বিগত কিছুদিন ধরে পুরোনো রূপে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আগের সপ্তাহেই জিতলো লিগ কাপের শিরোপা। তবে এরপর যে অ্যানফিল্ডে এসে এভাবে বিধ্বস্ত হতে হবে লিভারপুলের কাছে সেটি হয়তো ভাবেননি ম্যানইউ কোচ এরিক টেন হাগ। অ্যানফিল্ডে আসার আগে বলেছিলেন মাঠ কোনো ব্যাপার না, খেলাটাই আসল। তবে অ্যানফিল্ডে এসে বুঝলেন কেন এই মাঠকে প্রতিপক্ষের ত্রাস বলা হয়। কোডি গাকপো, ডারউইন নুনেজ ও মোহাম্মদ সালাহর জোড়া গোলে ম্যানইউকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে লিভারপুল।
নিজেদের এই জয়ে ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে সফল দুটি ক্লাবের মধ্যে পরাজয়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত ক্লপ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এটা আমাদের অন্যতম একটি সেরা পারফরম্যান্স। সবাই দেখেছে ছেলেরা কি করতে পারে। প্রথমার্ধটা ভাল কাটেনি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের বিপক্ষে খেলাটা ইউনাইটেডের জন্য কঠিন হয় পড়েছিল।’
সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৩ ম্যাচে মাত্র দ্বিতীয় পরাজয়ে কার্যত এক দশক পরে ইউনাইটেডের লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন অনেকটাই শেষ করে দিয়েছে। এখনো তৃতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড টেবিলের শীর্ষে থাকা আর্সেনালের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
কিন্তু মূল কথা হচ্ছে ১৯৩১ সালের পর প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক কোন ম্যাচে সবচেয়ে বড় পরাজয়ে ইউনাইটেডের সম্মানহানির বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। এই ধরনের পরাজয়ের রেশ সাধারনত দীর্ঘদিন রয়ে যায়। এর থেকে বেরিয়ে আসাটাও সহজ নয়।
ইউনাইটেড বস এরিক টেন হাগ বলেছেন, ‘ফলাফল বেশ স্পষ্ট, এটা অপেশাদার। আজ অনেক বিষয় ঘটেছে যা আমাকে রাগান্বিত করেছে। সহজ গোল হজম করা যার মধ্যে অন্যতম।’
বিশাল এই জয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা টটেনহ্যামের থেকে পয়েন্টের ব্যবধান কমিয়ে তিনে নামিয়ে এনেছে লিভারপুল। হাতে রয়েছে বাড়তি একটি ম্যাচ। গত মৌসুমে দুই লিগ ম্যাচ মিলিয়ে ক্লপের দল ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৯-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু এবারের মৌসুমে শুরুতেই জয় তুলে নিয়েছিল রেড ডেভিলসরা। আগস্টে ২-১ গোলে জয়ী হয়েছিল ইউনাইটেড। ইউনাইটেডের বস হিসেবেই সেটাই টেন হাগের প্রথম জয় ছিল। তবে ফিরতি লেগে যে অলরেডদের কাছে এভাবে বিধ্বস্ত হতে হবে সেটি হয়তো তখন কল্পনাতেও আনেননি টেন হাগ।
এদিকে আগের সপ্তাহে ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায়ের মুখে রয়েছে লিভারপুল। তারপরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের উড়িয়ে দেওয়া এমন পারফরম্যান্স। ক্লপ বলেন, ‘সবাই আমাদের জন্য অনুভব করে। সবাই জানে এখনো আমরা অনেক কিছুই করে দেখাতে পারি। আর এই মুহূর্তে আমরা এটাই প্রমান করে চলেছি।’
২০১৬ সালের পর থেকে অ্যানফিল্ডে জিততে পারেনি রেড ডেভিলরা। এবারো সেই অ্যানফিল্ডেই হতাশ হতে হলো ইউনাইটেডকে। বিরতির দুই মিনিট আগে গাকপোর হাত ধরে গোলের দরজা উন্মুক্ত হয়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ৪৩ মিনিটে এন্ডি রবার্টসন ইউনাইটেডের রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে ডাচ স্ট্রাইকার গাকপোর দিকে বল বাড়িয়ে দেন। কোনাকুনি শটে গাকপো এগিয়ে দেন লিভারপুলকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিভারপুলের নতুন সাজানো আক্রমণভাগ শেষ পর্যন্ত জ্বলে ওঠে। হার্ভি এলিয়টের ক্রস থেকে উরুগুইয়ান নুনেজ ৪৭ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। তিন মিনিট পর কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ডেভিড ডি গিয়াকে পরাস্ত করে গাকপো নিজের দ্বিতীয় গোল করেন।
ম্যাচের ৬৬ মিনিটে নুনেজের থ্রু বল থেকে সালাহ গোল করলে ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ৪-০। জর্ডান হেন্ডারসনের ক্রস থেকে একেবাওের ফাঁকায় দাঁড়ানো নুনেজ হেডের সাহায্যে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। ৮৩ মিনিটে ইউনাইটেডের বিচ্ছিন্ন রক্ষণভাগকে সহজেই কাটিয়ে সালাহ নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। লিভারপুলের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ১২৯ গোল করলেন মিশরীয় এই তারকা।
সালাহ বলেন, ‘মিথ্যা বলবো না, এটা আমার জন্য সত্যিই বিশেষ এক অর্জন। এখানে আসার পর থেকে এই রেকর্ড আমার মাথায় ছিল। প্রথম মৌসুম থেকেই আমি এই রেকর্ডের পিছনে ছুটেছি। ’
বদলি নেমে ৮৮ মিনিটে দলের হয়ে সপ্তম গোলটি করেন রবার্তো ফিরমিনো। শেষ পর্যন্ত ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠ থেকে ঘরে ফিরতে হয় ম্যানইউকে।
সূত্র: ইত্তেফাক