শৈলকুপার চর-রুপদহ গ্রাম, সময় ৯ ডিসেম্বর, ২০২০। ঘড়ির কাটায় তখন বাজে রাত আনুমানিক ১২টা। নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছেন রিপন। এমন সময় রিপনের মেজো ভাই নান্নুর ঘুম ভাঙলে সে গিয়ে দেখে রিপনের ঘর খোলা।
নান্নু তার স্ত্রী ফরিদা খাতুনকে ডেকে নিয়ে রিপনের ঘরে ঢোকে। রিপন তখন খাটের উপর ঘুমিয়ে। নান্নু গিয়ে গলা চেপে ধরে রিপনের আর স্ত্রী ফরিদা চেপে ধরে দু’পা। কিছুক্ষণ পরে নান্নু ঘর থেকে দা(ধারালো অস্ত্র) এনে রিপনের তলপেটে কোপ মারে। রক্তে ভেসে যায় রিপনের বেডসিট, বালিশ, মেঝে। এরপর রিপন কে সেই বেডসিট দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়।
বাড়ির পূর্বপার্শ্বে ডোবায় খোঁড়া হয় গর্ত, নান্নু গর্তের নরম কাঁদা সরিয়ে ফেলে। গর্ত খোঁড়ার পরে নান্নু ও তার স্ত্রী ফরিদা, রিপনের ঘরে এসে দুজনে রিপনকে নিয়ে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেয়। এরপর সেই বেডসিট আর বালিশের কভার চুলায় দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে নান্নুর স্ত্রী ফরিদা খাতুন। এদিকে রিপনের চাঁদর, স্যান্ডেল আর ঘড়ি রাখা হয় একটি ধান ক্ষেতের পাশে। রিপনের গলার চেইন আর আংটি রেখে দেয় তার স্বামী নান্নু। প্রচার করা হয় ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে রিপন।
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় প্রবাসী রিপন(২৮) হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক এই জবানবন্দী দিয়েছে রিপনের মেজো ভাই নান্নুর স্ত্রী ফরিদা খাতুন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ জবানবন্দী প্রদান করেন।
এ ঘটনায় রিপনের মেজো ভাই নান্নু পলাতক রয়েছে। পুলিশ ঘটনার ৭দিন পর বাড়ির পাশের ডোবা থেকে রিপনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
মালয়েশিয়া প্রবাসী রিপন ১২ নং নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের চর রুপদহ গ্রামের মৃত আব্দুল বারিক বিশ^াসের ছেলে। গত ১ বছর আগে সে দেশে ফিরে আসে। তার সন্তানসম্ভাবা স্ত্রী ঘটনার সময় তার বাবার বাড়িতে ছিলেন।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পারিবারিক কলহ ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ হত্যাকান্ড। রিপনের মেজো ভাই নান্নু ও নান্নুর স্ত্রী ফরিদা খাতুন উভয়ে মিলে এ হত্যাকান্ড ঘটায় বলে আদালতে স্বীকার করেন আটক নান্নুর স্ত্রী।