সুস্থতার জন্য হাড়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। আমরা প্রতিদিন এমন কিছু খাবার খাই যেগুলো হাড়ের জন্য খারাপ। দুর্বল হাড়ের প্রাথমিক লক্ষণ হলো মাড়ির রোগ, হাতের মুঠোতে শক্তি কম পাওয়া, নখ ভেঙে যাওয়া, শরীর বেঁকে যাওয়া, ঘাড়ে ব্যথা ইত্যাদি। হাড় দুর্বল হলে অনেক সময় অল্প আঘাতেই তা ভেঙে যায়। হাড়ের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদানের একটি হলো ক্যালসিয়াম।
আমাদের শরীর ক্যালসিয়াম নামক খনিজ সহজে গ্রহণ করতে পারে না। কিছু খাবার শরীরে ক্যালসিয়াম গ্রহণে বাধা দেয়। যে কারণে এই খনিজ শরীরে পৌঁছাতে পারে না। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, সি, ডি যুক্ত খাবার খেতে হবে। জেনে নিন কোন খাবারগুলো হাড়ের জন্য ক্ষতিকর:
ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার
প্রতিদিন পরিমিত ক্যাফেইন গ্রহণ ভালো অভ্যাস। তবে এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ২০১৬ সালে বিএমএইচ মুসকুলসকেলেটাল ডিসঅর্ডার এ প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে তা মেনোপজের পরে নারীর হাড়ের ঘনত্ব কমার কারণ হতে পারে। ক্যাফেইন হাড় থেকে ক্যালসিয়াম সরিয়ে দেয়, যে কারণে হাড়ের শক্তি কমে যায়। প্রতি ১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন প্রায় ৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম নষ্ট করে।
কোল্ড ড্রিংকস
কোল্ড ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পানের কোনো উপকারিতা নেই। তার মধ্যে একটি হলো, এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এই পানীয়তে চিনির পরিমাণ থাকে অনেক বেশি। এছাড়া এতে ক্যাফেইন, ফসফোরিক অ্যাসিডও থাকে। এই উপাদানগুলো হাড়কে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়।
প্রাণিজ প্রোটিন বেশি খাবেন না
আমাদের শরীর ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন পড়ে প্রাণিজ প্রোটিনের। এই প্রোটিন শরীর গ্রহণ করতে পারে সহজেই। তবে এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে সৃষ্টি হতে পারে সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া মানুষেরা অস্টিওপোরোসিস সমস্যায় ভুগে থাকেন। সেখান থেকে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়।
অ্যালকোহল
হাড়ের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর অভ্যাস হলো অ্যালকোহল গ্রহণ। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের ফলে হাড়ের ভর কমে যায়, হাড়ের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেইসঙ্গে বাড়ে হাড়ে ফ্র্যাকচারের প্রবণতা। মদ্যপানের অভ্যাস কম বয়সেই হাড় দুর্বল করে দিতে পারে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালকোহল পানকারীদের হাড় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
কফি
দুই এক-দুই কাপ কফি খাওয়া যেতেই পারে। তবে কফি বেশি খেলে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এতে থাকা ক্যাফেইন ক্যালসিয়াম গ্রহণে বাধা দেয়। কফি তাই মাঝে মাঝে খাবেন, নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করবেন না। হাড় ভালো রাখতে হলে তাই এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ধূমপান
ধূমপান মোটেই ভালো অভ্যাস নয়। বরং এর ক্ষতিকর দিক লেখা থাকে সিগারেটের প্যাকেটের গায়েই। ধূমপান থেকে দেখা দিতে পারে শরীরের অনেক সমস্যা। তার মধ্যে একটি হলো, এটি হাড় দুর্বল করে দেয়। ধূমপানের ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম ঠিকভাবে পৌঁছায় না। তাই ধূমপান ও তামাক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
অতিরিক্ত চিনি ও লবণ
শরীরের জন্য লবণ প্রয়োজন, তবে তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে। অতিরিক্ত লবণ বা চিনি গ্রহণ করা অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে হাড়ের ক্ষতি করতে কাজ করে এই দুই উপাদান। কারণ অতিরিক্ত চিনি ও লবণ খেলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায়।
অতিরিক্ত মাংস খাওয়া
মাংস হচ্ছে প্রাণীজ প্রোটিন। অতিরিক্ত মাংস মানেই অতিরিক্ত প্রোটিন। এই প্রোটিন শরীরে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি করে, একে নিষ্ক্রিয় করতে ক্যালসিয়াম কাজ করে থাকে। যার ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম কম পৌঁছায়। আর এই কারণেই আস্তে আস্তে হতে থাকে হাড়ের ক্ষয়।
সূত্র: ইত্তেফাক