চীনে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই রোগে দেশটি এ পর্যন্ত ২৫৯ জন মারা গেছেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার। অন্য অন্তত ১৬ দেশে এই নতুন ভাইরাস ছড়িয়েছে।
তবে করোনাভাইরাসের এই নতুন প্রজাতি ছড়িয়েছে বন্যপ্রাণী থেকে প্রাথমিকভাবে এমনটিই ধারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। খবর- বিবিসি বাংলা। প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ছড়ানো ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা বোঝা যাচ্ছে করোনাভাইরাস থেকে।
রয়াল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক টিম বেনটন বলছেন, গত ৫০ বছরে এ রকম অনেক ভাইরাস দেখা দিয়েছে। প্রাণীর দেহ থেকে সংক্রামক রোগের ভাইরাস মানুষের দেহে ঢুকে পড়েছে।
‘৮০-এর দশকে বানরজাতীয় প্রাণী থেকে এইচআইভি/এইডস ভাইরাসের সূচনা হয়েছিল। ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত এভিয়ান ফ্লু ছড়িয়েছিল পাখী থেকে। তবে বাদুড় থেকে করোনাভাইরস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর শূকরের দেহ থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে ২০০৯ সালে দেখা দিয়েছিল সোয়াইন ফ্লু।
এর আগে বাদুড় ও গন্ধগোকুল থেকে ছড়ায় সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্স নামের রোগ। আর আফ্রিকায় ছড়ানো ইবোলা রোগেরও সূচনা হয়েছিল বাদুড় থেকে।
করোনাভাইরাস মূলত ছড়িয়েছে চীনের উহান শহরের একটি অবৈধ বন্যপ্রাণী বিক্রির বাজার থেকে। প্রথমে শোনা যায় সাপ থেকে এবং পরে বাদুড় থেকে এ রোগ ছড়ানোর কথা বলা হয়। তবে মানুষ সব সময়ই প্রাণীর দেহ থেকে আসা নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
মানবদেহে নতুন যেসব সংক্রমণ দেখা যায় তার বেশিরভাগই আসে প্রাণী, বিশেষত বন্যপ্রাণী থেকে।
কীভাবে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে রোগ ছড়ায়?
বেশিরভাগ প্রাণীর দেহেই বাস করে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস, যা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এদের বলা হয় প্যাথোজেন। এই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া এক রকম অণুজীব। যাদের বাসস্থান হচ্ছে অন্য প্রাণীর দেহে। এরা ক্রমাগত বংশবৃদ্ধি করে টিকে থাকা। অন্যদিকে প্রাণীর দেহে যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ‘ইমিউন সিস্টেম’ থাকে তার কাজ হলো এসব ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসকে মেরে ফেলা।
তাই এসব অণুজীব টিকে থাকার একটি উপায় হলো নতুন নতুন হোস্ট বা নতুন প্রাণীর দেহে ছড়িয়ে পড়া। অন্যদিকে সেই নতুন হোস্টদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারও কাজ হচ্ছে ক্রমাগত নতুন অনুপ্রবেশকারীর মোকাবেলা করতে থাকা।
এই লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য ভাইরাসগুলো ক্রমাগত নিজেদের মধ্যে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটাতে থাকে, যাতে নতুন হোস্ট প্রাণীর ইমিউন সিস্টেম তাদের ঘায়েল করতে না পারে।
সব প্রাণীর দেহেই প্যাথোজেন বনাম ইমিউন সিস্টেমের মধ্যে পরস্পরকে ধ্বংস করার এই নিরন্তর লড়াই চলতে থাকে।
কী করা যেতে পারে
১. পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা।
২. পরিবেশগত পরিবর্তন ঠেকাতে হবে।
৩. নতুন প্যাথোজেন চিহ্নিত করতে হবে। জানতে হবে কোন কোন প্রাণী তা বহন করছে।
সুত্র-যুগান্তর