বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা ঘোষণার চার বছর হতে চললেও মেহেরপুরের গ্রাম গুলোতে বেড়েছে বাল্য বিয়ে। বাল্য বিয়ে সমপন্ন করতে অভিভাবকরা অবলম্বন করছে অভিনব কৌশল। বাল্য বিয়ের তালিকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের সংখ্যায় বেশি। নাম মাত্র মাওলানা দিয়ে এই বিয়ের কাজ সেরে ফেলছে মেয়ের স্বজনরা। কখনো কখনো মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের।
২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচীব শফিউল আজম মেহেরপুর ষ্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত এক সমাবেসে মেহেরপুর জেলা কে বাল্য বিয়ে মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা দেন। তৎকালীন জেলঅ প্রশাসক শফিকুল ইসলামের নিরন্তর প্রচেষ্টায় ঐ সময় বাল্য বিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে এসে ছিলো। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে কিছু অসাধু ঘটক ও কাজী রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই এ সকল বিয়ে হয়ে কার্য সম্পন্ন করছেন বলে বিভিন্ন ম্ধ্যমে জানা গেছে। বাল্য বিয়ে দেওয়ার দায়ে প্রশাসনের উদ্যোগে জেল-জরিমানা করা হলেও কোন ভাবেই থামছে না এই অপরাধ।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দেখা যায় গত বছর ও চলতি বছরেই বেশ কয়েক জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাধ্যমে বাল্য বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে অর্থদন্ড ও কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার আমঝুপিতে বাল্য বিয়ের দায়ে বরের ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
একই মাসের ২৮ তারিখে গাংনীর রামকৃষ্ণপুর গ্রামে বর ও বরের পিতাকে অর্থ দন্ড দেওয়া হয়। গাংনী উপজেলার চানপুর গ্রামে অভিনব কায়দায় বাল্য বিয়ের খপ্পরে পড়ে একুল ওকুল দুই কুলই হারিয়েছে ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক মেয়ে। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি বাল্য বিয়ের দায়ে কনের দাদা ও হুজুরের অর্থদন্ড করা হয়। বল্য বিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও রাতের আধারে অহরহ হয়ে যাচ্ছে বাল্য বিয়ে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৮ম থেকে এসএসসি পর্যন্ত অনেক মেয়ে বিবাহিত। আবার কারও হাতে আংটি পরানো আছে বিয়ে হবে বলে।
দারিদ্ররতা, জেএসসি, এসএসসি ফেল ও অসৎ সঙ্গে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়া ইত্যাদি কারনে বাল্য বিয়ে বেশি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে বেশ কয়েকজন বিবাহিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে। ভালো ছেলে আর পাওয়া যাবে না, বিয়ের পরও পড়া শুনা করা যায় এমন নানা কথা বলে আমাদের রাজি করানো হয়েছে।
শোলমারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দু-এক বছর সংসার করে ডিভোর্স হয়ে পূনরাই স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাহাবুব রহমান জানান, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে অনেক ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে বোঝাপাড়া খুব বেশি মধুর হয়না। কয়েক মাস আবেগের সাথে সংসার করে পরবর্তিতে আর ভালো লাগে না। ফলে অকালেই তাদের ডির্ভোসের মত সিদ্ধান্ত বেছে নিতে হয়। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও আমি ব্যাক্তিগত ভাবেও বাল্য বিয়ের তীব্র প্রতিবাদ করি। কিন্তু তারপরও আমাদের অজান্তেই অনেক বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
সীমান্ত বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করছি কিন্তু পেরে উঠছি না। কথাটা বলতে খারাপ লাগলেও সত্য, অনেক নাবালিকা বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে যারা নিজের ভালো মন্দ কিছুই বোঝে না। আমরা অভিভাবক সমাবেশে বাল্য বিয়ের কথাটা জোর দিয়ে বলি তাতেও কোন লাভ হয় না।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, বাল্য বিয়ে অপরাধ আমরা জানি। কিন্তু বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়ের উপর আমাদের ভরসা কমে গেছে। তারা বিভিন্ন অসৎ সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। নিজেদের মান সম্মানের কথা ভেবে ভালো কোন ছেলে পাওয়া গেলে বয়সের দিকে না তাকিয়ে বিয়ে দিয়ে দিই।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: আতাউল গনি বলেন, যে বাল্য বিয়ে গুলো হচ্ছে সে গুলো অতি গোপনে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাল্য বিয়ে বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
মেপ্র/ইএম