মুজিবনগর উপজেলার গৌরিনগর গ্রামের ফাহিমা খাতুন(৪০)। গতকাল সোমবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ঠিক সাড়ে ৯ টার দিকে কে যেন তার দরজায় কড়া নাড়ছে। ভয়ে সে অনেকটায় জড়সড়। রাতে কেউ তাকে ডাকার কথা নয়। তারপরও শীতের রাতে অনেকটায় আতঙ্ক নিয়ে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলেই সে হতবাক। তার সামনে মাথায় টুপি, গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। হাতে রয়েছে কম্বল। সে প্রথমে চিনতে পারেনি। টানা টানা কন্ঠে বলে উঠনে কারা আপনারা।
সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলে আমি আপনাদের উপজেলার ইউএনও। আপনি রাতে শীতে কষ্ট করেন তাই আপনাকে শীতের কম্বল দিতে আসলাম। এর পরেই ফাহিমা খাতুনের হাতে একটি কম্বল তুলে দেন ইউএনও। কম্বল পেয়ে চোখে পানি চলে আসে ফাহিমা খাতুনের। এমন ভাবে ইউএনও তার বাড়িতে আসবে কখনো ভাবিনি সে। হঠাৎ ইউএনও কে বাসায় পেয়ে বলছিলেন তার কষ্টের কথা।
শুধু ফাহিমাই নয়, শত বর্ষ বয়সী করিমন নেছা, বেদেপল্লী , ভিক্ষুক সহ আরো অনেক অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলে শীতের কম্বল দিচ্ছেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম।
এছাড়া গাড়িতে করে যেতে যেতে রাস্তায় চলাফেরা করা পাগল দেখলেও সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে তাদের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। এতে করে পাগলেরাও খুশি হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
প্রচন্ড শীতের মধ্যে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম বাড়িতে গিয়ে নিজের হাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে দেন শীতার্তদের। রাস্তার পাশে, প্রত্যন্ত গ্রামের প্রকৃত অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের খুঁজে খুঁজে কম্বল দেন তিনি।
এ সময় তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা শোনেন। এবং যাদের বেশি প্রয়োজন এমন গরিব দুস্থদের হাতে কম্বল তুলে দেন তিনি। তীব্র শীতের মধ্যে কখনও এসব গ্রামে হেঁটে যান আবার কিছুদূর গাড়িতে যান ইউএনও।
কম্বল পেয়ে করিমন নেছা বলেন, এই শীতে কেউ কোনো খোঁজ না নিলেও ইউএনও নিজে এসে কম্বল দিয়েছেন। কম্বল পেয়ে আমি অনেক খুশি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খায়রুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে বেদেপল্লী, রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগলসহ প্রায় ৫০টি পরিবারের দরজায় ঘুরে ঘুরে কম্বল দিয়েছি। এছাড়া উপজেলার কিছু মাদ্রাসায় ১৫০ টি মত কম্বল দিয়েছি।
পর্যায়ক্রমে এভাবেই খুজে খুজে অসহায় ব্যাক্তিদের মাঝে আমরা কম্বল বিতরন করবো।
তিনি আরও বলেন, এই শীতে গরিব, দুঃখী মানুষ খুব অসহায়। সবার উচিত এসব অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্রদের পাশে এসে দাঁড়ানো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লাল্টু মিয়া ও ছাত্র প্রতিনিধি সাওন হোসেন।