মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা পালনকারি আলমডাঙ্গার কৃতি সন্তান বীর প্রতীক সাইদুর রহমান রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যাচ্ছেন। ভারতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ৫ বাহিনির ৬ জন বীর প্রতীকসহ মোট ৩৬ জন ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন।
জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রিত হয়েছেন বাংলাদেশের ৫ বাহিনীর ৫ বীর প্রতীকসহ মোট ৩৬ জনের প্রতিনিধি দল।
এদের মধ্যে সেনা বাহিনীর ২ জন, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের ১ জন করে বীর প্রতিক, ৫ জন সেনাবাহিনির কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ২৫ জন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিজিবি-র প্রতিনিধি হিসেবে বীর প্রতীক সাইদুর রহমান যাচ্ছেন ভারতের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করবেন। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণের পর আজ ১৪ ডিসেম্বর সকালে ইনডিয়ান এয়ারলাইন্সে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিমানবন্দর পৌঁছবেন।
বেলা ১১টায় ভারতের বিমান বাহিনির প্রতিনিধি দল তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে হোটেল তাজ বাংলা হোটেলে পৌঁছে দেবেন। সন্ধ্যায় কলকাতার পেনারসেফ গেটে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সাথে ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকদের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে।
১৫ ডিসেম্বর অ্যালবাট এক্কা অডিটরিয়ামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি ইন্ডিয়ান আর্মিদের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ৩ জন সদস্যকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে কলকাতার বিজয় সরণিতে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রতিনিধি দল।
সকাল ১০টায় কলকাতার ভার্তিকায় ভারতের গণমাধ্যম সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় ফোর্ট উইলিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে আর্মি অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগে বিজয় দিবসের বিশেষ নৈশভোজে যোগ দেবেন।
১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পরিদর্শন করবেন, বিকেলে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। ১৮ ডিসেম্বর প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরবেন।
বীর প্রতীক সুবেদার মেজর (অবঃ) খন্দকার সাইদুর রহমান জীবনবাজী রেখে অকুতভয় এই বীর সেনানী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে করেছিলেন পর্যুদস্ত। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে তিনি যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশি পতাকা উত্তোলন করার দুঃসাহস দেখান।
এ অসম সাহসী কর্মকান্ডের ১ দিন পর ২৫মার্চ সকালে তিনি পাকিস্তান বাহিনীর কয়েকজন সেনাকে গুলিবিদ্ধ করেন। এ কারণে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকও হন। পরে ইপি আর সদস্যরা তাকে দরজা ভেঙ্গে মুক্ত করেন।
৩০ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনির ৭২টি কনভয় যশোর প্রবেশ করে। তিনি অ্যান্টি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামানের গোলায় সেই বিরাট কনভয়রাশির ভেতর ৫/৭টি ধ্বংস করেন।
৩১ জুলাই জামালপুর জেলার ধামিয়া এলাকায় বীর উত্তম শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন মমতাজের নেতৃত্বে তিনি পাকিস্তান বাহিনির মোকাবেলা করেন। সর্বাত্মক সেই যুদ্ধে ৩০/৩৫ জন সেনাবাহিনী ও ইপিআর সদস্য নিহত হন। সেই মরণপণ যুদ্ধের মুহুর্তে তিনি জীবনবাজী রেখে লড়েন। তিনি ১০/১২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত করেন।
কিন্তু নিজের পেটে গুলি লাগে। মারাত্মক আহত তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয় ভারতের গোয়াহাটি আর্মি হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থ্য হলে দেশে ফিরে সিলেট এলাকায় যুদ্ধে যোগ দেন।
১১ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাটে মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীনের নির্দেশে পাকিস্থান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন।
পাকিস্তান বাহিনী পেছন দিক থেকে আক্রমন চালালে বেকায়দায় পড়েন মুক্তিবাহিনি। সে সময় মেজর (অবঃ) জিয়াউদ্দীনের নির্দেশে কৌশলে সকলে সে স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু সাইদুর রহমানসহ ৫ সৈনিকের নিকট সে নির্দেশ পৌঁছে নি।
তিনি বেপরোয়া ভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর লাগাতার গুলি চালাতে চালাতে তাদের শরীর মাড়িয়ে পালিয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ধারাবাহিক বীরত্বের জন্য বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন।
তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃতি সন্তান এবং আলমডাঙ্গার ঘোষবিলা গ্রামের প্রয়াত খন্দকার আব্দুল মজিদের পুত্র।
-আলমডাঙ্গা প্রতিনিধি