নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ সমাপ্ত না হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেশ কয়েকটি কাজের চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আবার কোন কোন কাজ না করেই চুড়ান্ত বিল তুলে নেবার বা বিল প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। বার বার সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ না করা এবং কাজের চুড়ান্ত বিল প্রদান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন।
৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর-কুস্টিয়া সড়কে চোখতোলা মাঠে ৯৪০ মিটার রাস্তার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জহিরুল ইসলাম লিমিটেড। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি কাজটির কার্যাদেশ পান ওই প্রতিষ্ঠান। ভূগর্ভস্থ টিএণ্ডটি তারের কারণে মাঝে কাজটির গতি হারায়। দু‘দফা সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকেদারী প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ মে কাজটি শেষ হবার কথা ছিলো। নির্ধারিত সময়ের পরেও কাজটি এখনও শেষ হয়নি। গাংনী আসনের এমপি সাহিদুজ্জামান খোকন মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিদর্শণ করে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বার বার সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ না করার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমপি খোকন বলেন- এখন কাজের ৪০ শতাংশ অবশিষ্ট আছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে কাজ শেষ না হলেও গত জুন মাসে কাজের চুড়ান্ত বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকেদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা যায় কাজ এখনও চলামান। সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়াতে মেহেরপুর কুস্টিয়া ও মেহেরপুর থেকে কুস্টিয়া হয়ে দুরপাল্লার যাত্রিবাহী বাস যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মেহেরপুর-কুস্টিয়া সড়কে সরাসরি বাস ধর্মঘট পালন করেছে স্থানীয় বাস মালিক ও বাস শ্রমিক সংগঠন।
মেহেরপুর-কুস্টিয়া সড়কে আলমপুরে কাজলা নদীতে ৭ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১.৮২৮ মিটার সেতু নির্মাণ কাজের ঠিকেদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স লিঃ। কাজের শেষ সময় ছিলো ১৪ নভেম্বর ২০২০। বর্তমানে কাজটি এখনও চলমান। গত জুনে এই কাজের চুড়ান্ত বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকেদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ সরেজমিনে দেখা যায় কাজটি এখনও চলমান। এই ঠিকেদারের গাংনী-কাথুলী সড়কে ভাটপাড়া থেকে কুলবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তার সিলকোর্ট (১২মিলি) এবং রাস্তার দু‘পাশে মাটি ভরাটের কাজে ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার দু‘পাশে মাটি ভরাটের কাজ ছিল্ ো৪ লাখ টাকা মূল্যের। এলাকাবাসীর অভিযোগ কয়েক টলি মাটি দিয়ে আর মাটি ভরাট করা হয়নি।
সরেজমিনে গাংনী কাথুলী সড়কে গেলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন সিডিউলে মাটি রাস্তার দু‘পাশে মাটি দেবার এবং রাস্তায় ১২ মিলি সিলকোর্ট কথা বলা আছে। কিন্তু রাস্তার পাশে মাটি দেয়া হয়নি। রাস্তায় সিলকোর্টও সিডিউল মোতাবেক হয়নি। কাথুলী গ্রামের তরিকুল ইসলাম নামের এক যুবক জানান- নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে কাজের মান নিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বিষয়টি আমলে নেননি।
মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট ইমতিয়াজ বিন হারুণ জানান- কাজের অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুলনা জোনের কাছে অনিয়মের বিষয়টি জানিয়েছেন। তারপরেও সিডিউল মোতাবেক কাজ দেখে নেবার জন্য কাজের সাইডে কোন লোকবল দেননি। কাজে চরম অনিয়ম থাকার পরেও চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে।
মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন দায়ীত্বশীল কর্মকর্তা স্বীকার করেন কিছুকাজ বাকি থাকলেও উক্ত কাজগুলোর চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়েছে। তিনি অনুরোধ করেন তাকে উদ্ধৃতি করে কোন মন্তব্য প্রকাশ না করে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলার জন্য।
মেহেরপুরের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।