নানা গুণে সমৃদ্ধ জায়ফল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রভৃতি দেশে মূলত জায়ফল গাছের চাষ হয়। তবে ইতিহাস থেকে প্রাচীন ভারতে চিরহরিৎ এ বৃক্ষের চাষ ও ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতাঞ্চলে প্রচুর জায়ফলের চাষ হয়। জায়ফল বিভিন্ন রোগ আরোগ্যকারী গুণে সমৃদ্ধ। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে একে ত্রিদোষনাশক ভেষজ বলে অভিহিত করা হয়। জায়ফল রুচি বৃদ্ধি করে বা এক কথায় বলা হয় অরুচিনাশক। শরীর উষ্ণ রাখে, শক্তিবর্ধক, খিদে বাড়ায়, বায়ু-পিত্ত-কফের বৈষম্য দূর করে, ব্রণ, মেছতা, ত্বকের কালো দাগ ও শ্বেতী আরোগ্য করে। কোলাইটিস যাকে গ্রহণী বলে তা দূর করার একমাত্র উপায় জায়ফল। জায়ফল ঘষে নিয়ে দিনে দুবার মাথায় লাগালে বা কপালে প্রলেপ দিলে সাইনোসাইটিসজনিত যন্ত্রণায় চটপট আরাম দেয়। বুক ধড়ফড় করলে বা অতিরিক্ত পালপিটেশন হলে জায়ফল চূর্ণ ২৫ মিলিগ্রাম দুধসহ খেলে অব্যর্থ উপকার হয়। পেশির খিঁচুনি বা মাসকুলার ক্র্যাম্প হলে ২৫-৪০ মিলিগ্রাম জায়ফল চূর্ণ মধুসহ খেলে অব্যর্থ উপকার হয় বা জায়ফল ঘষে নিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগালে চটজলদি আরাম পাওয়া যায়। দাঁতের যন্ত্রণায় জায়ফলের তেল তুলোয় একটু শুষে ব্যথার স্থানে লাগালে উপকার হয়। গায়ে চাকা চাকা দাগ যাকে আমরা আমবাত বা আর্টিকারিয়া বলি, জায়ফলের তেল এ ক্ষেত্রে আশ্চর্য ফলদায়ক। অনিদ্রা মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলা যায়। তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শুকনো আমলকী দুই টুকরো সামান্য বিট লবণ ও এক চিমটে জায়ফল চূর্ণ রাতে শোয়ার আগে পানিসহ খেলে উপকার পাওয়া যায়। মধুর সঙ্গে জায়ফল ঘষে পেস্ট তৈরি করে খেলে অতিরিক্ত হিক্কা ও বমিভাব তৎক্ষণাৎ দূর হয়। জায়ফলের মলরোধ করার শক্তি আছে তাই অ্যাইমবিক কোলাইটিসে বা গ্রহণী রোগে সামান্য আখের গুড়ে জায়ফল চূর্ণ মিশিয়ে দিনে দুবার খেলে অব্যর্থ উপকার হয়। খাওয়ার রুচি বৃদ্ধিতে, খিদে ও হজমশক্তি বাড়াতে আপেল, কলা প্রভৃতিতে বা যে কোনো ফল ও স্যালাডে সামান্য জায়ফলের গুঁড়া বা চূর্ণ ব্যবহার করলে উপকার হয়।