ডিজিটাল বাংলাদেশে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সবাই জড়িত। প্রতিদিন ব্যবহার ও যোগাযোগের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। সাধারণ জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আমাদের ভার্চুয়াল জগত। আমাদের সাধারণ জগতে যেমন নিরাপত্তার দরকার রয়েছে ঠিক তেমনি দরকার রয়েছে ভার্চুয়াল জগতেও।
করোনার সময় যেখানে বাইরে বের হওয়াই বিপদ, সেখানে অনলাইনে যোগাযোগ, প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা, প্রাতিষ্ঠানিক মিটিং ও শিক্ষাদানের অন্যতম ভরসার জায়গা ইন্টারনেট।
অনলাইন নিরাপত্তার ব্যাপারে ক্রাফের প্রেসিডেন্ট জেনিফার আলম বলেন, ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস থেকে বাঁচতে বুঝে শুনে ওয়েবসাইট ভিজিট করার বিকল্প নেই। বিশেষ করে এডাল্ট ও পর্ণ সাইট, টরেন্ট সাইট, অ্যাডভারটাইসমেন্ট সাইটগুলো থেকে বিরত থাকাই ভালো। অ্যাড এবং পপ-আপগুলোতে ক্লিক না করাই ভালো।
কিন্তু কী হবে যদি কখনো দেখেন আপনার প্রতিদিনের ব্যবহৃত কম্পিউটারের ডেটা বা ফাইলগুলো আর ব্যবহার করতে পারছেন না। সব ফাইল আছে ঠিকই কিন্তু ওপেন হচ্ছে না বা অ্যাক্সেস করতে পারছেন না। আপনার ডিভাইসটি অদ্ভুত আচরণ করছে এবং ফাইলগুলোর এক্সটেনশন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে তাহলে বুঝে নিবেন আপনার ডিভাইসটি র্যানসামওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
র্যানসামওয়্যার কি?
র্যানসামওয়্যার হচ্ছে একটি ম্যালওয়্যার যা আপনার কম্পিউটারে ঢুকে আপনার সব ডেটা এনক্রিপটেড করে দিতে পারে। কিছুটা লক করার মতো কিন্তু এর চেয়েও ভয়ংকর। ডেটা এনক্রিপ্টেড হওয়ার পর আপনার কাছে বিট কয়েনের মাধ্যমে টাকা চাওয়া হবে যাকে বলে র্যানসাম-পে। হ্যাকারের ম্যাসেজ থাকে যদি আপনি টাকা দেন তবেই আপনার ডেটা পাবেন, নয়তো ডেটা আর ফেরত পাবেন না।
এই ব্যাপারে ক্রাফের টেকনিক্যাল হেড সিয়াম বিন শাওকত বলেন, হ্যাকাররা র্যানসামওয়্যারের জন্য টার্গেট করে ব্যাংক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে। কারণ হ্যাকাররা জানে এসব জায়গায় অনেক মূল্যবান ডেটা থাকে। এ ক্ষেত্রে ডেটা ডিক্রিপ্ট করার জন্য র্যানসম-পে চাওয়া হয়, আমার মতে র্যানসাম-পে বা ডেটা ডিক্রিপ্ট করার জন্য টাকা না দেয়াই ভালো। কারণ টাকা দেয়ার পরে যে আপনি আপনার ডেটা ফেরত পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
ভার্চুয়াল জগতে রয়েছে আমাদের পরিচয়, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ইন্টারনেট যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এই তথ্য নিরাপদে রাখা ও নিরাপদে আদান-প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই তথ্য বা ডেটা নেয়ার বা নষ্ট করার জন্য হ্যাকাররা এই ভার্চুয়াল জগতে অনেক ফাঁদ পেতে রেখেছে যেমন ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ফিশিং লিংক ইত্যাদি দিয়ে। এসব জায়গায় বিচরণ করলেই পড়তে পারেন বিপদে।
ক্রাফের আইটি অ্যানালিস্ট রাইয়ান মালিক বলেন, আসলে নিম্ন আয়ের দেশগুলো বিশেষ করে এশিয়ান দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ক্রাক সফটওয়্যার খুব বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এমনকি অপারেটিং সিস্টেমও ক্রাক ব্যবহার করছি। সত্যি বলতে ক্রাক সফটওয়্যারগুলোতে হ্যাকাররা ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার যুক্ত করে দেয়, যাতে করে প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ফ্রিতে ব্যবহার করার লোভে আমরা নিজেরাই নিজ কম্পিউটারে ক্রাক সফটওয়্যারের সঙ্গে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে নিচ্ছি এবং বিপদে পরছি। বেশিরভাগ সময় এসব ম্যালওয়্যার এফইউডি হওয়ার কারণে অ্যান্টিভাইরাস ডিটেক্ট করতে পারে না।
আসুন জেনে নেয়া যাক র্যানসামওয়্যার থেকে বাঁচার ১৩টি উপায়-
১। জরুরি ডেটা ব্যাকআপ রাখা। যাতে করে র্যানসামওয়্যার অ্যাটাক হলেও ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়।
২। ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার না করা।
৩। অপারেটিং সিস্টেম, অ্যান্টিভাইরাস ও সফটওয়্যার সব সময় আপডেট রাখা।
৪। অথেনটিক সোর্সের বাইরে থেকে আসা স্প্যাম মেইল ওপেন করা যাবে না।
৫। এডাল্ট ও পর্ণ সাইট ভিজিট করা যাবে না।
৬। অ্যান্টিভাইরাসের রিয়েল টাইম প্রোটেকশন, অ্যাক্সেস কনট্রোল অন রাখতে হবে।
৭। সি-ড্রাইভসহ প্রতিটা ড্রাইভের সিস্টেম প্রোটেকশন অন রাখতে হবে।
৮। র্যানসামওয়্যার আক্রান্ত ডিভাইসটিকে নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন (আইসোলেট) রাখতে হবে, যাতে করে অন্য ডিভাইসে ছড়িয়ে না পরে।
৯। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করবেন না, যদি জরুরি করতেই হয় তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করুন।
১০। কর্পোরেট কোম্পানি ও ব্যবসার জন্য মেইল সার্ভার স্ক্যানার ব্যবহার করুন।
১১। যেকোন ইউএসবি ডিভাইস কম্পিউটারে সংযুক্ত করা যাবে না।
১২। ট্রাস্টেড সাইট ছাড়া কিছু ডাউনলোড করা যাবে না।
১৩। নিজস্ব সচেতনতার বিকল্প নেয়, তাই সচেতন থাকুন।
যে কোন ধরনের সাইবার ক্রাইম বা হ্যারাসমেন্টের শিকার হলে নিকটস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য গ্রহণ করবেন। জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা (টোল ফ্রি) ৯৯৯ নম্বরে কল করতে পারবেন জরুরি পুলিশি সাহায্যের জন্য। সূত্র-যুগান্তর