লড়াই, সংগ্রাম, সাফল্য ও উন্নয়নের নাম শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া দলটি যখন যোগ্য নেতৃত্বের সংকটে, ঠিক সেই সময় দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আবির্ভাব হয় শেখ হাসিনার। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় ওই সময়কার সরকারের রক্তচক্ষু ও নানা বাধা উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।
বাবা-মায়ের স্নেহের যে বাড়িতে বড় হয়েছেন, সেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে, প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার কণ্টকাকীর্ণ পথ চলা। শুরু করেন দেশের গণতন্ত্র এবং জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতের সংগ্রাম। আর এই সংগ্রামের পথে তাকে পার হতে হয় নানা প্রতিবন্ধকতা। কারাবরণ করতে হয় একাধিকবার। অদ্যাবধি তাঁকে হত্যার জন্য ২০বার সশস্ত্র হামলা করা হয়। অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বারবার মৃত্যুর মুখে পড়েছেন তিনি। তবুও পিছপা হননি, লড়াই সংগ্রাম ছেড়ে দেননি শেখ হাসিনা। শত বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন এবং হত্যার হুমকিসহ কোন কিছুই তাকে টলাতে পারেনি একবিন্দুও। বরং সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে।
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও নানা রকমের টাল-বাহানা করে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নতুন ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্রও করেছিল তারা। দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে হাস্যকর এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে ৬ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সচেতন দেশবাসী এসব অনিয়ম ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপকৌশলকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। সে সময় বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় সংকট ও অরাজক পরিস্থিতিতে সেনা সমর্থিত আরেক নতুন ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু তারাও নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।
বিলম্বে হলেও তারা পূর্বোক্ত ভোটার তালিকা সংশোধন ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির মাধ্যমে একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে “দিন বদলের সনদ”-রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন শিরোনামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ভূমিধস বিজয় অর্জন করে।
এরপর ২০১৪ সালে “এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ” স্লোগানে সরকার গঠন করে ১০টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে “নিরাপদ ব-দ্বীপ” প্রণয়নের রূপরেখা প্রদান করে ২০১৮ সালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে আবারও সরকার গঠন করে। ফলস্বরূপ আজ অবধি দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেছে বলেই দেশের বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে ধারাবাহিক উন্নয়নের প্রতিফলন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং দেশের মানুষ এর সুফল ভোগ করছে।
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে এবং যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনাসেতু, তিস্তাসেতু, পায়রাসেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুরসেতু, দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ করেছে সরকার। এছাড়া ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওয়ার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগ্রামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোট-বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করে যাচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরেই নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, স্থান করে নিয়েছে স্যাটেলাইট বিশ্বে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপন করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপনেরও প্রস্তুতি চলছে। গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নির্মাণ এবং মহাকাশে স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা সহজতর হয়েছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ কোটির বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। একসময় দেশের টিভি চ্যানেল গুলো স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করত। সে টাকা এখন থেকে দেশেই থেকে যাবে।
বাংলাদেশ বেতারসহ দেশের সবক’টি টেলিভিশন চ্যানেল এবং দেশের একমাত্র ডিটিএইচ অপারেটর ‘আকাশ’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা নিচ্ছে। এ ছাড়াও দেশের ৩১টি দুর্গম ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের ১১২টি স্থানে টেলি যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যাংক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্রবাহিনী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে তাদের সেবা দেওয়া শুরু করেছে। ফলে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু, উপজেলা শহরে ব্যাংকের এটিএম বুথ নির্মাণসহ সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়।
শুধু দেশি সংস্থা নয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশ গুলো হচ্ছে হন্ডুরাস, তুরস্ক, ফিলিপাইন, ক্যামেরুন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার ফলশ্রুতিতেই এ সব কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক মন্দা, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সংকট সৃষ্টি করলেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘সতর্ক’ অবস্থানে থেকে এবং অনেক ক্ষেত্রে ‘কৃচ্ছতা’ অবলম্বনের মাধ্যমে সে সংকট এখন পর্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করেছে।
দেশের অর্থনীতি এখনো বেগবান রয়েছে। ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিশ্বের ২০তম অবস্থান অর্জন করবে বলেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। অথচ বিএনপি-জামায়াতসহ একদল ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশকে বরাবরের মতো পিছিয়ে নেবার যারপরনাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের বিরতিহীন অপতৎপরতা, সব ষড়যন্ত্রকারী এবং “নিন্দুকের মুখে ছাই” দিয়েই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে।
তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি উন্নয়নের রোলমডেল। এর পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। তার এই অনন্য কৃতিত্বে গর্বিত বাংলাদেশ, গর্বিত বাঙালি জাতি। দেশবাসীর উচিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নকে উপলব্ধি করা এবং সে মতে কার্যক্রম গ্রহণ করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন এলেই বিএনপিসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করতে অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে থাকে। অতীতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি-জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য দল যারা বৈধ-অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনগণকে দেয়া অঙ্গীকারের ৩০ ভাগও বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি প্রতিশ্রুতি পূরণে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, নির্বাচনের আগে যেসকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, তার শতভাগ পূরণ করার চেষ্টা করেছে এবং জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে।
সরকার প্রধান শেখ হাসিনাও চলমান মেয়াদে চতুর্থ বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, “এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি- তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন”। তিনি আরও বলেন, “রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজ সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি”। আর এই বিশাল সফলতা ও বদলে দেয়া দেশের অর্জনগুলো সামনে রেখেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ”-এর প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বিশদ বিবরণও দিয়েছেন। এ কথা আজ সর্বাংশে সত্য যে, শেখ হাসিনা তার সুচিন্তিত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন।
বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী, সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়তে। এজন্য শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করা দরকার। বিগত সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সাফল্য অর্জন করছে, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে আমাদের সকলের উচিত সরকারকে সকল কর্মকাণ্ডে সহায়তা ও আকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখা।
লেখক: প্রক্টর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।