মহামারী কোভিড-১৯ করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় বেড়েছে বাল্য বিয়ের প্রবণতা। প্রায়ই বাল্য বিয়ের কবলে পড়ছে কন্য শিশুরা। করোনার শুরু থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, যৌন হয়রানী, পরিবারের আয়ের ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে বাল্য বিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজ।
দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে কন্যা সন্তানের সুরক্ষা, বন্ধু বান্ধবের সহায়তা না পাওয়া, সহায়তা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা এবং দারিদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় মহামারীর বলি হচ্ছে শিশু কন্যারা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে লোক চক্ষুর আড়ালে অভিভাবকরা অপ্রাপ্ত বয়সেই কন্যা শিশুদের বিয়ে দিচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। স্থানীয় প্রশাসন বাল্য বিয়ে, সাইবার বুলিং, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা তৈরী এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্তকরনের লক্ষে সমাজে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহন করলেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
অনেকটা লোক-চক্ষুর আড়ালে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বাল্য বিয়ের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন কমলমতি এইসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। পরিবারের চাপে কিছু বুঝে উঠার আগেই বিয়ের পিড়িতে বসছে কমলমতি এইসব শিক্ষার্থীরা। ফলে অনেক সময় ডির্ভোসের মত ঘটনাও ঘটছে এইসব কন্য শিশুদের ভাগ্যে । সম্প্রতি উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক মেয়েকে বাল্য বিয়ের ৩ দিনের মাথায় স্বামীর ঘরে যেতে না চাওয়ায় ডির্ভোসের পথ বেছে নিয়েছে পরিবারটি।
অনেক অপ্রাপ্ত নাবালিকা মেয়েরা স্বামী সংসার কিছু না বুঝলেও জোর পূর্বক পাঠানো হচ্ছে স্বামীর ঘরে। সচেতন মহল মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্য বিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারের অভিভাবকরা যদি সচেতন না হয়, তবে কোন ভাবেই বাল্য বিয়ের মত ভয়ানক এই ব্যাধি রোধা করা সম্ভব না।
একটি গবেষণায় ইউনিসেফ বলেছে, সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ এর কারনে ১ কোটির বেশি কন্যা শিশু বাল্য বিয়ের ঝুঁকিতে। বাংলাদেশ বাল্য বিয়েতে বিশ্বের চতুর্থ। বাল্য বিয়ে রোধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম সর্ম্পকে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাল্য বিয়ে বন্ধে ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সেই সাথে বাল্য বিয়ের খবর পেলেই ঘটনাস্থলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অর্থদন্ড সহ কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এসময় তিনি, বাল্য বিয়ে রোধে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।