নানা সমস্যায় জর্জরিত মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরী। লাইব্রেরীয়ানের ১৫ বছর বেতন বকেয়া, অবকাঠামো সংস্কার, আসবাবপত্র ও বই সংকটের কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে লাইব্রেরীটির কার্যক্রম। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এর কোন অভিভাবক নেই। তবে, উপজেলা চেয়ারম্যান বলছেন লাইব্রেরী চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।
১৯৮৪ সালে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্ত¦রের একটি কক্ষে গাংনী উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। লাইব্রেরীটি পরিচালনার জন্য ১৯৮৭ সালে গোলাম রহমান নামের একজন চুক্তিভিত্তিক লাইব্রেরীয়ান নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠার সময়ে পাঠকদের পদভারে মুখর থাকলেও বই সংকট সহ নানা সমস্যায় দিনদিন পাঠক সংখ্যা কমতে থাকে।
এদিকে গত ১৪ বছর বেতন ভাতা না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন লাইব্রেরীয়ান গোলাম রহমান।
লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ নতুন বই সংযোজন করা হয় না। রয়েছে চেয়ার, টেবিল ও আলমারীর সংকট। গত কয়েক বছর লাইব্রেরী বন্ধ থাকায় মূল্যেবান বই সহ আসবাবপত্র এখন অনেকটাই নষ্ট হয়ে পড়েছে।
স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বড়রাও অবসর সময়ে বই ও পত্রিকা পড়ার জন্য লাইব্রেরীতে আসলেও বছরের পর বছর বন্ধ থাকে একারনে জ্ঞান চার্চা থেকে পিছিয়ে পড়ছেন তারা। অবকাঠামো সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনীর ছাত্র সজল আহমেদ বলেন লাইব্রেরীটি সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। যে কারনে বই পুস্তক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে অনেক শিক্ষার্থীরা বই পড়তে এসে ফিরে যায়।
পাঠক আলাউদ্দীন আহম্মেদ, রজব আলী বলেন, যখনই লাইব্রেরীতে আসি তখনই বন্ধ পাওয়া যায়। লাইব্রেরীটা খোলা হলে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারতাম। লাইব্রেরীর অবস্থা দেখে মনে হয় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রকিব বলেন, পাবলিক লাইব্রেরী মানুষের জ্ঞানার্জনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট যায়গা। এখানে তরুন বয়সে বই, পত্রিকা পড়তে আসবে। তবেই তো আমাদের ছেলে মেয়েরা মেধাবী হয়ে গড়ে উঠবে। উপজেলার মত একটা যায়গায় লাইব্রেরী রয়েছে। অথচ, দীর্ঘদিন যাবৎ এটি বন্ধ থাকে। আমাদের ছেলে মেয়েরা জ্ঞানার্জনের জন্য যাবে কোথায়। এজন্য আমরা আমাদের মেধাবী ছেলে মেয়েদের হারাচ্ছি। বই পড়ার সুযোগ না পেয়ে তারা মাদকে ঝুঁকছে। আমি নিজেও বই পত্রিকা পড়ার জন্য আসতাম। কিন্তু বছরের পর বছর লাইব্রেরীটা বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ থেকে বঞ্জিত হচ্ছি। লাইব্রেরীটা দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। অবসর সময়ে বই পড়তাম। বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা
গাংনী উপজেলা নুরুল ইসলাম রিন্টু বলেন, আমি এক সময় গাংনী উপজেলা পরিষদের এই লাইব্রেরীর নিয়মিত পাঠক ছিলাম। লাইব্রেরীটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। লাইব্রেরীটি চালু হওয়া উচিৎ।
লাইব্রেরীয়ান গোলাম রহমান বলেন, ১৪ বছর বিনা বেতন দায়ীত্ব পালন করেছি। এখানে দায়ীত্ব পালন করতে গিয়ে সংসার পরিজন নিয়ে অনেক দেনায় পড়ে রয়েছি। লাইব্রেরীতে এক সময় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে ৪/৫ টি পত্রিকা আসতো। পর্যাপ্ত পরিমান বই রয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর পরিমান পাঠক আসতো এখানে। অথচ, সেই জমজমাট লাইব্রেরীটি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমার ও লাইব্রেরীর খোঁজ খবর রাখার মত কেউ নেই।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ খালেক বলেন, করোনার কারনে প্রায় তিন বছর বন্ধ ছিলো। নতুন উদ্যোমে লাইব্রেরীটি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে বসে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।