আগামীকালের সূর্যটা আক্ষরিক অর্থেই নতুন সূর্য হবে সাকিব আল হাসানের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দেওয়া নিষেধাজ্ঞার শৃঙ্খলমুক্ত হবেন তিনি কাল। আজ বুধবার আইসিসির বহিষ্কারাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কাল থেকেই সাকিবের মাঠে নামতে আর কোনো বাধা থাকবে না। ব্যাট-বল হাতে আবারও তাঁকে পাবে বাংলাদেশ।
সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আন্তর্জাতিক দুটি ম্যাচ ও আইপিএলের একটি ম্যাচে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা জানাননি আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ দুটি ছিল জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে। সে বছর আইপিএলের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ-কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ম্যাচেও একই অপরাধ করেন সাকিব, ভাঙেন আইসিসির দুর্নীতি দমন আইনের ২.৪. ৪ ধারা।
তিনবারই তাঁকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন দীপক আগারওয়াল নামের ভারতীয় এক বাজিকর। তাঁর সঙ্গে সাকিবের তিনবার যোগাযোগ হওয়ার প্রমাণ পায় আইসিসি। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ আগস্ট দুই দফা তারা সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সাকিব ভুল স্বীকার করলে ২৯ অক্টোবর আইসিসি তাঁকে সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বছরটি ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। নিয়ম অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রথম বছরে আইসিসির আর কোনো আইন না ভাঙায় পরের এক বছরের শাস্তি থেকে সাকিব রেহাই পাবেন।
গত এক বছরে তিন সংস্করণের ক্রিকেট মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের হয়ে ৩৬টি ম্যাচের বাইরে থাকার কথা ছিল সাকিবের। তবে মার্চের মাঝামাঝি করোনাভাইরাসের কারণে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর বেশির ভাগ ম্যাচই হয়নি। বাংলাদেশ দলকেও তাই খুব বেশি ম্যাচে সাকিবের অভাব অনুভব করতে হয়নি। সাকিব নিষিদ্ধ থাকার সময়ে বাংলাদেশ দল খেলেছেই মাত্র ৪টি টেস্ট,৩টি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টি।
এ বছর অক্টোবর-নভেম্বরের শ্রীলঙ্কা সিরিজটি করোনার কারণে স্থগিত না হলে এই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট দিয়েই সাকিবের ক্রিকেটে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কোয়ারেন্টিন জটিলতায় সিরিজটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এ বছর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হবে না তাঁর। সাকিবকে অপেক্ষায় থাকতে হবে জানুয়ারিতে হতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজের জন্য।
তবে সাকিব মাঠে নেমে যেতে পারেন আগামী মাসের মাঝামাঝি শুরু হতে যাওয়া বিসিবির পাঁচ দলের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়েই। বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও সেখান থেকেই খোঁজ রাখছেন এই টুর্নামেন্টের। টুর্নামেন্টে খেলতে এ মাসের শেষে না হলেও আগামী মাসের শুরুতে সাকিব দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। নির্বাচকেরাও তাঁকে রেখেই গড়ছেন দল। কাল বিসিবির পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেছেন, ‘বিসিবি চায় সাকিব যত দ্রুত সম্ভব খেলায় ফিরুক। এই মুহূর্তে আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই। তবে পাঁচ দলের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সাকিব খেলবে।’
নিষেধাজ্ঞার এক বছর সাকিব বেশির ভাগ সময়ই পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন। গত মার্চে দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে সেখানে চলে যান তিনি, ফেরেন গত ২ সেপ্টেম্বর। এই ফেরার উদ্দেশ্য ছিল শ্রীলঙ্কা সিরিজকে সামনে রেখে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নেওয়া। পুরোনো কোচ নাজমুল আবেদীনের তত্ত্বাবধানে বিকেএসপিতে অনুশীলনও শুরু করেছিলেন। কিন্তু সিরিজটি স্থগিত হয়ে গেলে এ মাসের শুরুতে সাকিব আবারও ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে। এবার অবশ্য সেখানে গিয়েও চালিয়ে গেছেন অনুশীলন। জাতীয় দলের ফিজিওর সূচি মেনে ফিটনেস অনুশীলনের পাশাপাশি কোচদের দেখিয়ে দেওয়া ব্যাটিং-বোলিংয়ের কিছু ড্রিলও করেছেন।
গত এক বছর খেলা থেকে দূরে থাকলেও করোনাকালে সাকিব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মানবতার সেবায়। নিলামে তুলেছেন নিজের বিশ্বকাপের ব্যাট। সাকিব আল হাসান ফাউন্ডেশন গঠন করে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের মধ্যে খাবার বিতরণ ছাড়াও চিকিৎসকদের জন্য দিয়েছেন উন্নত মানের পিপিই-মাস্ক, সেবামূলক একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুদান হিসেবে দিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স।