সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের মদদপুষ্ট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সালাম বাঁধন কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মন্ত্রীর মদদে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের ঠিকাদারী বাগিয়ে নিয়ে তিনি সম্পদের মালিক হন।
এছাড়া অনলাইন জুয়ার পরিচালনা করেও হয়েছেন টাকার মালিক। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ব্যবসায়ী বা আর্থিক সুবিধা নেওয়ার নিয়ম না থাকলে ক্ষমতার দাপটে তিনি এসকল সুবিধা নিয়েছেন। তার দাদা আমিনুল ইসলাম মুজিবগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার। চাচা আমাম হোসেন মিলু মুজিবনগর উপজেলার অপসারিত চেয়ারম্যান। চাচার হাত ধরে তিনি মন্ত্রীর পাশে স্থান করে নেন। মন্ত্রীর সুপারিশে বনে যান ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সভাপতি।
অভিযোগ রয়েছে আব্দুস সালাম বাঁধন ও তার চাচা আমাম হোসেন মিলু মেহেরপুরের অনলাইন জুয়ার অন্যতম গডফাদার। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে চাচা-ভাতিজা দুজনই আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আইনে কয়েকটি মামলাও হয়েছে।
অনলাইন জুয়ার অপরাধে বিভিন্ন সময় পুলিশ প্রায় অর্ধশত এজেন্টকে গ্রেফতার করলেও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সিগনাল থাকায় এই দুই চাচা-ভাতিজাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এনিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে ওই সময় আক্ষেপ ছিলো। তবে তা প্রকাশ করতে পারেনি।
আব্দুস সালাম বাঁধন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি হলেও গঠণতন্ত্র অমান্য করে তিনি বিয়ে করেছেন, এক কন্যা সন্তানের পিতা, পেশায় ঠিকাদারী ব্যবসায়ী। ছাত্রলীগের জেলা কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হলেও ক্ষমতার লিপ্সু বাঁধন সম্মেলনও করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা জানান, জেলা কমিটির সভাপতি বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের বাবা। তিনি ঠিকাদারী ব্যবসার আড়ালে মূলত অনলাইন জুয়ার অন্যতম সম্রাট। ক্ষমতায় থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে না পারলেও ভিতরে তাদের ক্ষোভ রয়েছে।
ছাত্রলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে তিনি হয়েছেন কোটিপতি। ছাত্র না থাকলেও তিনি মায়ের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে বিভিন্ন দপ্তরের কাজ করছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইড, শিক্ষা প্রকৌশল অধিপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বিভিন্ন ঠিকাদের সাথে লিয়াজু করে কাজ করতেন। প্রতিটি কাজে রয়েছে অনিয়ম ও দুনীতির অভিযোগ। আব্দুস সালাম বাঁধনের অনিয়ম নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও কালের কণ্ঠতে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার বিল আটকিয়ে দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পরে সিডিউল মোতাবেক কাজ করে তাকে বিল নিতে হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি কাজে অনিয়মের কারণে দুদকের অনুসন্ধানও চলছে বলে জানা গেছে।
এ সকল অনিয়ম, কমিটির পদ, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে তিনি হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। নিজ গ্রাম মুজিবনগর উপজেলার যতারপুরে এক সঙ্গে একই দাগে কিনেছেন ৫বিঘা জমি। যার বর্তমান বাজার মূল্যো প্রায় দেড় কোটি টাকা। এছাড়া শহরে এবং গ্রামেও তার জমি কেনার খবর পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের সভপতি হলেও তিনি যাতায়াত করতেন প্রাইভেট কারে। পরে বিষয়টি সমালোচনা কারটি বিক্রি করে দেন বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুস সালাম বাঁধন। পরবর্তিতে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পুর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা কমিটির সভাপতি বিবাহিত এবং ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র একাধীক বার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তবুও কেন্দ্র কোন ব্যবস্থা নেননি। ফলে জেলা কমিটি ও অন্যান্য ইউনিটের কমিটিগুলো অনেক বিবাহিত নেতা তৈরি হয়েছে। যা ছাত্র রাজনীতির জন্য কাল হয়েছে।