ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ ৭ ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সাফদারপুরে মরহুম মোহাম্মদ আলী খানের বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্বজনরা দাবী করেছেন, রাজাকারের তালিকায় আসা মোহাম্মদ আলী খান ও আব্দুর রশিদ খান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁরা ৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরের মেজর এম.এ.মঞ্জুর ও মেজর ওসমানের অধিনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। নিয়েছেন ভারতে প্রশিক্ষণ।
সংবাদ সম্মেলনে আপন চাচাতো দু’ভাই সাফদাপুর বাজারের মৃত কোবাদ আলী খাঁনের ছেলে মরহুম মোহাম্মদ আলী খান ও মৃত গোলাম রহমান খাঁনের ছেলে আব্দুর রশিদ খাঁনের স্বজন ফিরোজা আলম, হামিদ খাঁন, হীরন খাঁন, এস কে ফয়েজ আহাম্মেদ রিয়ন, সিহাব উদ্দিন, মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদসহ তালিকায় আসা আরো ৫ ব্যক্তিসহ তাদের পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
তালিকায় আসা বাকী ৫ জন হলেন- সাফদারপুর বাজার পাড়া এলাকার আক্কাচ আলী মন্ডল, আবুল হোসেন খোকন, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী ও সাফদারপুরের পার্শ্ববর্তী দোড়া ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রামের সুলতান মোল্যা। আবুল হোসেন খোকন নামে সাড়ে ৩ বছরের এক শিশুকেও রাজাকারের তালিকায় আনা হয়েছে। ২০১৪ সালে করা পাসপোর্টে আবুল হোসেন খোকনের জন্ম তারিখ ১০ জুলাই ১৯৬৮। সে হিসাবে যুদ্ধকালীন সময়ে তার বয়স ছিল ৩ বছর ৫ মাস ২১ দিন। যার পাসপোর্ট নং-ইই০৪৩৮৬০০. তারিখ ১৬ই জুন ২০১৪।
তালিকায় আনা মোহাম্মদ আলী মিয়ার রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের দেয়া সাময়িক সনদপত্র। এ সনদে তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তালিকায় আসা আক্কাচ আলী মন্ডল ৯৬ সালে প্রথমবার আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর স্বপ্রণোদিত হয়ে সাফদারপুরে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার জন্য ৫ শতক জমি দান করেন। যার বর্তমান মূল্য কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা। বেনু মিয়া নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তিনি ২০১৭ সালে মৃত্যু বরণের পর তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
এমনকি যথানিয়মে তার পরিবার রাষ্ট্র প্রদত্ত ভাতাসহ যাবতীয় সুবিধাদি ভোগ করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোহাম্মদ আলী খান ও আব্দুর রশিদ খানের ভাগ্নে এস.কে ফয়েজ আহম্মেদ রিয়ন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয় মোহাম্মদ আলী খান স্বাধীনতার পর বিপুল ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি বৃহত্তর ১নং সাফদারপুর ওয়ার্ডের মেম্বর ছিলেন। যুদ্ধের সময় নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের রাত যাপনসহ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।
পরে বৃদ্ধ মায়ের আকুতিতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বজনদের দাবী সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটি মহল রাজাকারের তালিকায় দু’ভাইকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যা আমাদের পরিবারকে হতাশা ও উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আমরা অনিয়ন্ত্রিত ও অশুদ্ধ তালিকা থেকে দু’ভাইসহ ৭ জনের নাম প্রত্যাহারের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত: মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪৬ জনের নাম এসেছে। এর মধ্যে সাফদারপুর ইউনিয়নেই ২২ জন।