সুন্দরবন অংশে গত তিন বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪। এ অবস্থায় আজ বিশ্বের ১১৩টি দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্বের যে কটি দেশে বাঘ রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘বাঘ বাড়াতে করি পণ, রক্ষা করি সুন্দরবন’।
করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে বন বিভাগ সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। গত বছরের ২২ মে সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাকিং জরিপের মাধ্যমে এ তথ্য উঠে আসে। বর্তমানে সুন্দরবনে আগের তুলনায় চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য কমেছে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বন বিভাগের হিসাবমতে, ৫৩টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১৫টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় মানুষ পিটিয়ে হত্যা করেছে ১৪টি, একটি মারা গেছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে, বাকি ২৫টি বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারিরা। অধিক মুনাফার আশায় বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, চামড়া, হাড়, দাঁত, নখ পাচার ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আর এটি দেশ ও দেশের বাইরে চলে যেত চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
আশার কথা, একের পর এক বনদস্যুদল আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ায় বাঘ নিধন কমে এসেছে। তবে সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেও হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের বসবাসের জন্য উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েকশ’ বাঘ বিলুপ্ত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ অবস্থায় সুন্দরবনে বাঘের আবাসভূমি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। সুন্দরবনে একসময় চোরা শিকারি আর বনদস্যুদের হাতে একের পর এক বাঘ নিধন হতো। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবন ও লোকালয়ে বাঘের হামলায় ২ শতাধিক মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে শ’খানেক জেলে-বনজীবী, বন বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ও সাইকোলজি বিভাগের ডিন প্রফেসর একে ফজলুল হক বলেন, বাঘ কমার অন্যতম কারণ চোরাশিকারি ও বনদস্যুদের হাতে বাঘ নিধন। বাঘের মূল্য অনেক বেশি। তাই একটি বাঘ হত্যা করার পরপরই দ্রুত চোরা মার্কেটে পাচার হয়ে যায়। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বাড়াতে আবাসস্থল, খাবার ও প্রজনন নির্বিঘ্ন-নিরাপদ করা প্রয়োজন।
বন ভবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (প্রশাসন) ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বাঘের অবাধ বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে প্রজনন মৌসুমের সুন্দরবনে তিন মাস পর্যটন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বন বিভাগ। বর্তমানে বাঘের মৃত্যুর হার কমেছে। সুন্দরবন পাহারায় স্মার্ট প্যাট্রোলিং টিম কাজ করছে। এতে সুন্দরবনে বাঘ অবাধ বিচরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধূরী জানান, বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের ২৩ থেকে ৫১ ভাগ এলাকা সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। বাঘ রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও র্যাব তৎপর রয়েছে।