স্ত্রী-সন্তানসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় হুইপ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি।
বিষয়টি নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
সংসদ সদস্য মিসবাহর স্ট্যাটাসটি যুগান্তর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘তিনজনই করোনা আক্রান্ত হয়ে গেলাম। করোনার শুরু থেকে মানুষের সাথেই ছিলাম। করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করেছি। গ্রামে, বাজারে, শহরে, বন্যাদুর্গত গ্রামে, আশ্রয়কেন্দ্র সবখানেই ছিলাম। নির্বাচনী এলাকায় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি নিজের শরীরে নিয়েছিলাম। সারাদিন মানুষের সাথে থেকেছি। যদিও মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত ছিল।
মার্চে বিভিন্ন ইউনিয়ন, গ্রাম আর ফসলরক্ষা বাঁধে ঘুরে বেড়িয়েছি। ঢাকা-সিলেট ৬ লেন সড়ক সুনামগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার জন্য, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সুনামগঞ্জের ট্রাফিক পয়েন্টে স্মরণকালের বৃহৎ গণসমাবেশ করেছিলাম মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে।
এলাকাতেও বেশ কাজ ছিল। অনেকে অপেক্ষায় ছিল। আসব বলেছিলাম তাদের। হলো না। করোনা থাবা বসিয়েছে একেবারে শক্ত হাতে। কথা রাখতে পারিনি। ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জে নমুনা দিলাম। ১৯ তারিখ রাতে আমার আর দীনার পজিটিভ আসলো। দুইজন করোনা আক্রান্ত।
রাতে দুইজন চলে আসলাম ঢাকায়। মতি ভাই, ভাবি, আমার মেয়ে রোদসি আর ছেলে বিস্ময় সিলেট গিয়ে সকালে নমুনা দিলেন টেস্টের জন্য।
সুনামগঞ্জে সরকারিভাবে নমুনা দিলে রিপোর্ট আসে তিন দিনে। সিলেট থেকে রাতে জানিয়েছে আমার বিস্ময়ের রিপোর্ট পজিটিভ। মাসুম সন্তানটিও করোনা আক্রান্ত। রাজনীতি করি বলেই জনগণের কাছে থাকা ইবাদত মনে করি।
মানুষও ভালোবেসে সারাদিন বাসায় আসেন। সবার জন্য আমার সাদামাটা পৈতৃক বাড়ি থাকে উন্মুক্ত। সহজ সরল মানুষেরা করোনা সতর্কতা মানেন না। সরল মানুষদের কিছু বলতে পারি না। কষ্ট পাবেন। হাত না মেলালে কষ্ট পান। মেলাতে হয়। মাস্ক ছাড়াই একেবারে পাশে এসে কথা বলেন। দাবি নিয়ে বলেন। উনাদের এই আন্তরিকতা আনন্দ দেয়। ভালো লাগে। মহামারি পরাজিত হয় স্নেহ-ভালোবাসার কাছে। তবে মহামারি বড় নিষ্ঠুর। মানুষের ভালোবাসা-স্নেহকে সম্মান করে না।
ঢাকা এসে বুকের সিটি স্ক্যান করিয়েছিলাম আমাদের। দীনার বুকে বেশ সমস্যা রয়েছে। আমার বিস্ময়ের ছোট শরীর করোনা আক্রান্ত। সমস্ত সিদ্ধান্তের মালিক মহান আল্লাহ। সবার কাছে দোয়া চাই। আমাদেরকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন।
অসুস্থ জেনে অনেকে ফোন করছেন। ক্ষমা করবেন। ফোন রিসিভ করছি না বলে। কৃতজ্ঞতা আপনাদের কাছে।’