“শেখ হাসিনার অবদান, কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণ” এই ¯স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০০ সাল থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালিত হয়ে আসছে।
বর্তমানে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, শিশুর যতœ, গর্ভকালীন ও গর্ভ পরবর্তী সেবাসহ ২৭ ধরনের ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতি ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় প্রায় তিন লক্ষ গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে সেবা দানের জন্য রয়েছে ৩৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত ক্লিনিকগুলো দুই কক্ষ বিশিষ্ট ও স্বল্প পরিসরে অবস্থিত।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অবকাঠামোগত দূর্বলতা, সংস্কারের অভাব এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার অনুপোযুক্ত হওয়ার ফলে সেবা প্রদান ও গ্রহনে বাধা হয়ে দাড়ায়।
নিরাপদ খাবার পানি, টয়লেট সুবিধা ও হাত ধোয়ার সুযোগ না থাকায়, প্রায়ই সেবা নিতে আসা রোগীদের বিশেষ করে গর্ভবতী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী রোগীদের অসুবিধায় পড়তে হয়।
উপজেলার ৩৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৯টি ক্লিনিকে এ অবস্থার পরিবর্তন এনেছে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক বাস্তবায়িত এলজিআই লেড ‘ওয়াশ ইন হেল্থ’ প্রকল্প।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতা প্রদান করে আসছে বেসরকারি আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইড ও জাতীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘এসকেএস’ ফাউন্ডেশন।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ খাবার পানির জন্য স্থাপন করা হয়েছে নলকুপ, পুরুষ ও নারীদের জন্য চলমান পানির ব্যবস্থাযুক্ত পৃথক টয়লেট, রোগী ও সেবাদানকারীদের হাত ধোয়ার সুবিধার জন্য বেসিন এবং গর্ভবতী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক রোগীদের ক্লিনিকে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে র্যাম্প।
দূর-দুরান্ত থেকে আসা সেবা গ্রহীতাদের বসার ব্যবস্থাও যুক্ত করা হয়েছে সংস্কারকৃত ক্লিনিকগুলোতে।
ইউনিয়ন পরিষদের এই প্রকল্পে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রদান করা হয়েছে হুইল চেয়ার। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ বৃদ্ধি করা হয়েছে নিয়মিত তদারকী এবং স্বাস্থ্য-পুষ্টির সাথে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে সেবা দানকারী কর্মীদের।
পাশাপাশি, দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে উক্ত ক্লিনিকগুলো পরিচালনা কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানকারী কমিউনিটি গ্রæপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রæপের সদস্যদের।
গাড়াডোব কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফাহমিদা খাতুন জানান সংস্কারের পূর্বের বছরে সেবা গ্রহিতার সংখ্যা ছিল ৬০২৮জন এবং সংস্কারের পর তা বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬৭৭ জন। বর্ধিত রোগীর তুলনায় সরবরাহকৃত ঔষধের সামঞ্জস্য না থাকায় সেবা নিতে আসা সকল রোগীকে রেজিস্টারভুক্ত করা সম্ভব হয়না।
সানঘাট গ্রামের বাসিন্দা সাবানা খাতুন বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের বর্তমান পরিবেশ খুবই সুন্দর বিশেষ করে খাবার পানি, টয়লেটের ব্যবস্থা, বসার জায়গা সবই আছে কিন্তু ঔষধ পাওয়া যায় না মাসের অর্ধেক দিন। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ ঔষধ বাড়িয়ে দিলি আমারা গরীব মানুষগুলা বাঁচি।
কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা বলেন, সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সংস্কার ও ওয়াশ পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে এসডিজি-৬ লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি অবদান রেখেছে অত্র ইউনিয়নসহ গাংনী উপজেলাবাসীর জন্য।
আমি বিশ্বাস করি, যথাযথ কারিগরী ও আর্থিক সহযোগিতা পেলে এই রকম আরও অনেক উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে ইউনিয়ন পরিষদ।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, ক্লিনিকগুলোর ওয়াশ রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা তহবিল গঠন করা হয়েছে কমিউনিটি গ্রæপের সহযোগিতায়। টেকসই উন্নয়নে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন সরকারী নীতিমালার বাস্তবায়ন, ইউনিয়ন পরিষদের নজরদারী ও পর্যাপ্ত সরকারী বরাদ্দ।
জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যসেবা দেশের সকল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই কমিউনিটি ক্লিনিক করেছেন।
তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মানের দিক থেকে মেহেরপুর জেলার সরকারী-বেসরকারি সংস্থা, স্থানীয় সরকার ও সাধারণ জনগনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় পরিচালিত উক্ত প্রকল্পটি একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে গাংনী উপজেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আক্তারুজ্জামান, গাংনী