ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু’র শ্রীফলতলা গ্রামের কৃষক আজিবর রহমান ওরফে আজি বক্সের নিকট থেকে অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজির খবর পাওয়া গেছে। নিরীহ এই গ্রাম্য কৃষকের গায়ে সুদ কারবারীর মিথ্যা তকমা লাগিয়ে সংবাদ পরিবেশনের ভয় দেখিয়ে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন সাইদুল ইসলাম ও সাহেব আলী নামের স্থানীয় দুইজন সাবেক ইউপি সদস্যসহ ইনসান আলী, আশরাফুল আলম, সিহাব আলী নামের কথিত ৩ জন সাংবাদিক। চাঁদার টাকা না পাওয়ায় তারা নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে ঐ গ্রাম্য কৃষক অভিযোগ তুলেছেন।
গতকাল সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় ঝিনাইদহ প্রেস ইউনিটির কার্যালয়ে ঐ কৃষক এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি মোঃ আজিবর রহমান, গ্রাম- শ্রীফলতলা, উপজেলা হরিনাকুন্ডু, জেলা ঝিনাইদহ একজন সহজ-সরল চাষী। আমি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। এ বাদে আমার আর কোন পেশা নেই। আমার কৃষিকাজের উপার্জন দিয়ে বহু কষ্টে আমার একটা ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছি। আমার আরেক ছেলে বর্তমানে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করছে। সন্তানদের চাকুরীর সুবাদে আমি বর্তমানে অর্থনৈতিক ভাবে অনেকটা সাবলম্বী।
আমাদের উপজেলাজুড়ে জমি বন্ধক / লিজ দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আমি বর্তমান অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় গ্রামের অনেকেই বিপদে পড়ে আমার কাছে জমি বন্ধক রাখতে আসে। তাদের বিপদের কথা শুনে আমি সরল মনে জমি বন্ধক/লিজ নিয়ে আসছি এটা সত্য। কিন্তু আমি আমার জীবদ্দশায় কখনো কোনদিন সুদের কারবারের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু বর্তমানে জেলাজুড়ে সুদে কারবারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলমান থাকায় এর সুযোগ নিয়ে ২ জন জনপ্রতিনিধি ও তিনজন সাংবাদিক আমার গায়ে সুদে কারবারীর মিথ্যা তকমা লাগিয়ে সংবাদ প্রকাশের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমার নিকট থেকে মোটা অংকের চাদা দাবি করে আসছে।
আনুমানিক ৭/৮ দিন আগে হঠাৎ করেই স্থানীয় সাবেক মেম্বার সাইদুল, সাবেক মেম্বার সাহেব আলী, আজিজুল শেখ ও জামালসহ সাংবাদিক পরিচয়ে ইনসান আলী,আশরাফুল, সিহাব ও শহিদুজ্জামান বাবু নামে কয়েকজন সাংবাদিক মোটরসাইকেল যোগে এসে আমার বিনা অনুমতিতে বাড়িতে প্রবেশ করে।
এসময়য় তারা বলেন,তাদের কাছে নাকি অভিযোগ আছে আমি সুধে কারবারি করে এলাকার মানুষদের নিঃস্ব করে ফেলেছি। আমি তাদের কাছে জমি বন্ধক রাখার বিষয়ে স্বীকার করলেও সাংবাদিক শিহাব, আশরাফুল ও বাবু আমাকে জোর করে সুদের কারবার করার কথা স্বীকার করার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা আমাকে সুদে কারবারী বানিয়ে নিউজ করা ও থানায় মামলা করার হুমকি দেন। এ সময় স্হানীয় সাবেক দুই ইউপি সদস্য সাইদুল ও বাবু আমাকে আমাকে বলেন, সাংবাদিকদের সাথে ঝামেলা করলে তোমার ক্ষতিই হবে। তার চেয়ে কম-বেশি করে বিষয়টা মিটমাট করে নাও। অপরাধ করা বা না করো সাংবাদিক আসলে তাদের খরচাপাতি দিতে হয়। এ সময় খরচা কত টাকা জানতে চাইলে সাংবাদিক ইনসান বলেন, তুমি মিয়া জাতে সুদে কারবারি। বহু উপর পর্যন্ত তোমার নামে রিপোর্ট আছে। তোমার ছাড় দিলে সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে লাখ দুয়েক টাকা হলে সব ম্যানেজ করে নিয়ে তোমাকে বাচানো যাবে।
আমি দিতে অস্বীকার করায় তারা নিউজ করে দেবে বলে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায়। ঘটনার পরে গত ২/৩ দিন আগে ইনসান সহ আরো ২/৩ জন এসে আবারো ঐ পরিমান চাঁদা দাবি করে।
আমি দিতে অস্বীকার করায় তারা আবারো নিউজ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। সেদিমই ইনসান ০১৯১০৮১৩৫৯৯ নম্বর থেকে কল দিয়ে বলে এই নাম্বারে ৩০ হাজার টাকা পাঠাও।
আমি তাদের দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ না করায় গত শনিবার হরিণাকুন্ডুতে অভিনব কৌশলে আজি বক্সের সুদের ব্যবসা” শিরোনামে দৈনিক এই আমার দেশ, দৈনিক গড়ব বাংলাদেশ” সহ বিভিন্ন শিরোনামে লাইভ বিডি ঝিনাইদহ (Live BD jhenada) তালাশ টাইমস্ নামে বিভিন্ন আইডি থেকে অনলাইনে তারা মিথ্যা নিউজ প্রকাশ করে।
তাঁরা আমার কাছে কোন অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে, উদ্যেশ্য প্রনোদিত ভাবে এই সংবাদ প্রচার করেছে। তাদের কাজে সামাজের কাছে আমার সম্মান নষ্ট হয়েছে বলে আমি মনে করছি।
এমতাবস্থায় আমি সমাজের কাছে মুখ দেখাতে না পেরে কয়েকবার আত্মহত্যার মত জঘন্যতম পাপ কাজ করার জন্য ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম। বিষয়টি আমার পরিবার টের পাওয়ায় যদিও তা সফল হয়নি।
তবে পরিস্থিতির কারণে যদি এমন পথ বেছে নিতে হয় তবে এর জন্য দ্বায়ী থাকবে সাইদুল মেম্বার, কথিত সাংবাদিক ইনসান, শহিদুজ্জামান বাবু, আশরাফুল ও শিহাব।
আমি আপনাদের কাছে আমার একটাই দাবি আমি অ-শিক্ষিত মানুষ হিসেবে সুদে কারবারী বলে যা জানি তা হলো, নগদ টাকা দিয়ে তার লাভ নেওয়া।
আমি তা কখনোই করিনি বা করবোও না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তার সত্যতা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন। এটা আপনাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ। আপনাদের আরো অবগত করাতে চাই-আমার নামে যে নিউজের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, সেই ভিডিওতে যাহারা সাক্ষাৎকার দিয়েছে তাদের একজনের কাছ থেকে আমার ৬ শতক জমি বন্ধক রাখা আছে। ভিডিওতে দেখানো বাকিদের সাথে আমার কোন দিন কোন লেন দেন হয় নাই।
আমি গ্রামের একজন পাট ও তামাক চাষি। আমি সারাজীবন চাষ করে আসছি। এই সাবেক মেম্বার সাইদুল ও কথিত সাংবাদিক ইনসান আমার কাছ থেকে চাঁদা নিতে না পেরে,আমি একজন সুদে কারবারি বলে অভিযোগ দিয়ে হরিনাকুন্ডু থানা থেকে পুলিশ এনে আমাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছিল।
পরে থানা থেকে আসা পুলিশ সদস্যরা তদন্ত করে আমাকে দোষী প্রমাণিত করতে না পারাই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার না করে চলে যায়। আমি এই সাবেক মেম্বার সাইদুল এবং কথিত সাংবাদিক ইনসানের সড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচতে চায়। সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আমার বিরুদ্ধে করা প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করে এই কথিত সাংবাদিকদের হাত থেকে আমাকে বাঁচতে দিন।