মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে হেরোইনের রমরমা ব্যবসা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরণনেশা হেরোইন। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হেরোইন ব্যবসায়ীরা। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে হেরোইন সেই সাথে বাড়ছে হেরোইনসেবীদের সংখ্যা। এতে করে যুবসমাজ জীবন বিনাশী হেরোইন সেবন করে বিপথগামী হচ্ছে। বাড়ছে অভিভাবকসহ স্থানীয় মহলে উদ্বিগ্নতা।
অন্যদিকে মাদক ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। একাধিক হেরোইনসেবী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেহেরপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় মৃত বাবলার স্ত্রী মমতাজ এখন হেরোইনের টপ ব্যবসায়ী। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পযর্ন্ত চলে তার হেরোইন বিক্রির কাজ। মমতাজ নিজেই তার বাড়ির গলিতে হেরোইনসেবীদের কাছে হেরোইন পৌঁছে দেন। বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা হওয়ায় উঠতি বয়সী হেলপার, সুপারভাইজার, রিকশা চালকসহ স্থানীয় যুবক ও বিভিন্ন এলাকার হেরোইনসেবীদের ভীড় লেগেই থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হেরোইনসেবী বলেন, মমতাজ নিজেই সীমান্তবর্তী এলাকা বুড়িপোতা থেকে হেরোইন বহন করে নিয়ে আসে তাকে সহযোগিতা করে রিপন নামের এক রিকশা চালক। আবার এই রিপন মমতাজের হেরোইন বিক্রিতেও সহযোগিতা করে। রিপন এলাকায় গিট্টু রিপন নামে পরিচিত। সে নিজেও একজন হেরোইনসেবী। হেরোইন আনা নেওয়ায় তার সেবনের ব্যবস্থা হয়ে যায়। মমতাজের সাথে সরাসরি সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে হেরোইনসেবীরা রিপনের সাথে যোগাযোগ করে।
স্টেডিয়াম পাড়ার প্রগতি ক্লিনিক সংলগ্ন মৃত রহমানের ছেলে শামীম, রাইহান, শাহীন ও তাদের মা বউসহ একই পরিবারের ৮ জন সদস্য দেদারসে চালাচ্ছে হেরোইন এর ব্যবসা। নিজের বাড়িতে ও বিভিন্ন যায়গায় ভ্রাম্যমান হিসেবে তাদের ছোট বড় ছেলে দিয়ে দির্ঘদিন ধরে হেরোইন পৌছে দিচ্ছে মাদকসেবীদের কাছে। এরা পেশায় রিকশাচালক হলেও হেরোইন বিক্রি করে বর্তমানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। এদের মধ্যে শামীম হেরোইনে আসক্ত ও চিহ্নিত হেরোইন ব্যবসায়ী। প্রথমদিকে প্রশাসনের কাছে কয়েকবার ধরা পড়লেও জেল থেকে বেরিয়ে আবারো একই পেশায় জড়িয়ে পড়ে। বিগতদিনে প্রশাসনের তোড়জোড়ে হেরোইন ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়লেও অদৃশ্য কারণেই মরণনেশা হেরোইন চলতে রমরমা ব্যবসা। শামীম এর নামে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
শহরের কাজী অফিস পাড়া, পুরাতন পোষ্ট অফিস পাড়া, শিশু বাগান পাড়া, স্টেডিয়াম পাড়া, ঘোষ পাড়া, নতুনপাড়া, কোর্ট পাড়া, বড় বাজার এলাকায় হেরোইনের রমরমা ব্যবসা দিগুনহারে বেড়ে চলেছে।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বর্তমানে যেভাবে হেরোইন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালাচ্ছে এ কারণে আমরা আতংকিত। একে তো প্রশাসনের তৎপরতা নেই তাতে আবার সহজলভ্য ও হাতের নিকট হেরোইন পাওয়ার কারণে চোখের সামনেই অনেককে এই পথে যেতে দেখছি। ফেন্সিডিল ও গাঁজা ব্যবসায়ীরা যখন কোনঠাসা সেই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে হেরোইন ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, মমতাজের বাড়ির গোলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হেরোইনসেবীদের ভিড় লেগেই থাকে। মহিলা সরাসরি এসেও হেরোইন পৌঁছে দেয়। মহিলা এখানে এসে এলাকার পরিবেশটা নষ্ট করে ফেলছে। ষ্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা ও বাগানের ভিতরে বাড়ি হওয়াতে দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আগে ছেলেপিলে এক আধটু গাঁজা-টাজা খেত কিন্তু এখন অধিকাংশ হেরোইন এ আসক্ত হয়ে পড়েছে। একসময় যারা এগুলো ঘৃণা করতো তারাও আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
আবার গলিতে হেরোইন কিনে বাগানে কোন ঘেরার ভেতর না হয় জুয়েলের বাড়িতে না হয় রাস্তার পাশে যে গাড়িগুলো থাকে তার ভিতরে চলে হেরোইন সেবনের কাজ। সকাল থেকে শুরু হয় চলে রাত প্রর্যন্ত। এসকল কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে আমাদেরই বিরক্তি ধরে গেছে।
এটার একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পেপারে বা ফেসবুকে দেখি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও ডিবি পুলিশ শুধু গাংনীসহ বেশকিছু এলাকায় অভিযান চালিয়ে থাকে শহরের বুকের ওপর এভাবে হেরোইন ব্যবসা করছে তারা জানতে পারে না ? নাকি তলে তলে ভাগ খায় কে জানে। মহিলা আবার ডিবি পুলিশের ভয়ও দেখায়। তাহলে আপনারই বোঝেন কি চলছে। দয়াকরে বিষয়টি নিয়ে একটু লেখালেখি করেন।
মেহেরপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, অনেক আগে শুনেছিলাম সে ফেন্সিডিলের ব্যবসা করে। তখন বিভিন্ন অভিযোগের কারণে তাকে নিষেধ করেছিলাম। হেরোইন বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে হেরোইন বিক্রি একটা জঘন্যতম কাজ। যুবসমাজকে বাঁচাতে অবশ্যই আমার আমাদের দায়িত্ব থেকে বাঁধা সৃষ্টি করবো এবং সেইসাথে প্রশাসনের কাছে আমি অনুরোধ করবো অতিদ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
মেহেরপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুরুর কবির রিপন বলেন, যুবসমাজকে এই মরণনেশা থেকে বাঁচাতে অবশ্যই আমার আমাদের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমি এ ব্যাপারে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। বর্তমানে আমি অসুস্থ। আমি সুস্থ হয়ে উঠলেই সকলের সহযোগিতায় এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমার ওয়ার্ডে কেউ মাদক ব্যবসা করতে পারবে না।