হোম ডেলিভারি শব্দ দুটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, মার্কেট প্লেস, কুরিয়ার সার্ভিস, সুপারশপগুলোর অনলাইন বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও এই করোনাকালে তার ব্যতিক্রমও দেখা গেলো। করোনা সংকটকালে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা ‘মোবাইল শপ’ বন্ধ রাখলেও চালু করেছেন নতুন উদ্যোগ ‘হোম ডেলিভারি’। ক্রেতার ঘরে মোবাইল পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া এই বাজার চালু রাখতে অন্যদের মতো মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী, মোবাইল শপের মালিক, খুচরা বিক্রেতারা হোম ডেলিভারি সেবা চালু করে মোবাইল ফোনের ব্যবসা সীমিত পরিসরে হলেও চালু রেখেছেন।
এদিকে খুলতে শুরু করেছে মোবাইল ফোন তৈরির কারখানা। একটি মোবাইল ফোন কারখানা সীমিত পরিসরে চালু করে উৎপাদন শুরু করেছে। আরও অন্তত দুটি কারখানা শিগগিরই চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকার ঘোষিত ছুটির (লকডাউন) শুরুর দিকে মোবাইল বিক্রি ২০ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। এখন তা ৩০-৪০ শতাংশে উঠে এসেছে। ১০ মে’র আগেই বিক্রির হার ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করেন সংগঠনের নেতারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এরইমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন শপ চালু করবে। বিএমপিআইএ সূত্র আরও জানায়, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী পুরোপুরি লকডাউন থাকায় বিক্রি একেবারে বন্ধ রয়েছে। এই তিনটি জেলায় প্রচুর সংখ্যক মোবাইল ফোন বিক্রি হয় বলে সূত্র জানায়।
স্যামসাং, শাওমি, সিম্ফনি চালু করতে যাচ্ছে অনলাইন শপ। এরইমধ্যে স্যামসাং চালু করেছে। ওয়ালটন এ মাসের মাঝামাঝি তাদের অনলাইন শপ থেকে নতুন ফোনের (এন ৪) প্রি-অর্ডার নেবে। গ্যাজেটস শপ গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারও চালু করেছে অনলাইন শপ। ফিজিক্যাল স্টোর চালুতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ থাকায় অনেকে শপিং মল বা ফিজিক্যাল স্টোরে গিয়ে মোবাইল ফোন নাও কিনতে পারেন। সেসব ক্রেতার করোনাভাইসের আতঙ্ক দূর করতেই অনলাইন শপ চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন স্মার্টফোন ব্যবসায়ীরা। নিজেদের ডেলিভারি সিস্টেম চালু করে বা কুরিয়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নিয়ে অনলাইন শপের ডেলিভারি সিস্টেম চালু করতে চান তারা।
স্মার্টফোন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেলো, সবার টার্গেট ঈদ। ঈদের আগের ১০-১২ দিনকে তারা ‘ব্রিদিং স্পেস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই সময়ে যে পরিমাণ বেচাবিক্রি হবে, তা দিয়ে অন্তত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনটা চালু রাখা যাবে। এতে করে কর্মীদের সহযোগিতা করাও হবে।
সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, ঈদের আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি (সীমিত পরিসরে) না দিলে এ মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। বোনাস তো আরও অনেক পরের বিষয়। তাদের অভিমত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনেই মোবাইল শপ খোলা রাখা হবে। কর্মীরা সব প্রতিষ্ঠানের (মোবাইল শপ) কাছেই আছে। প্রধান কার্যালয়ের প্রয়োজনীয় কর্মীদের এরই মধ্যে ডেকে নেওয়া হয়েছে সীমিত পরিসরে অফিস চালু রাখার জন্য। ১০ মে’র আগেই অবশিষ্ট আয়োজন তারা সম্পন্ন করতে পারবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে এ দেশে স্যামসাং কারখানার উদ্যোক্তা ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘দুদিন হলো আমরা কারখানা খুলেছি সীমিত পরিসরে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা উৎপাদনে গিয়েছি। এখনই আমরা ‘ফুল প্রোডাকশনে’ যেতে পারছি না। কারণ, আমাদের সে সক্ষমতা এখন নেই। তাছাড়া বাজারে চাহিদাও কম। সব মিলিয়ে আমরা আস্তে ধীরে শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন উপায়ে মোবাইল বিক্রি করছেন। কেউ অর্ডার করলে দেওয়া হচ্ছে। ওয়েবসাইটে দেখে অর্ডার করলে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন অনলাইনে বিক্রির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ১০-১৫ শতাংশ।’ তিনি জানান, স্যামসাং মোবাইলও নিজেদের ব্যবস্থাপনায় অনলাইনে বিক্রি শুরু হচ্ছে। অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মোবাইল শপের বাইরে কাগজে সাঁটানো, ‘মোবাইল প্রয়োজন হলে… এই নম্বরে কল দিন’ এমন তথ্য দেখা গেছে। ওইসব নম্বরে ফোন দিলে মোবাইল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এভাবে বিক্রি হওয়া মোবাইলের সংখ্যা একেবারে কম নয় বলে মনে করেন দেশে শাওমি মোবাইল ফোনের অন্যতম প্রধান পরিবেশক সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেড (এসইবিএল)-এর প্রধান নির্বাহী দেওয়ান কানন। তিনি বলেন, ‘মোবাইল বিক্রি হচ্ছে, তবে খুবই লিমিটেড স্কেলে। যে যেভাবে পারছে, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েও মোবাইল বিক্রি করছে। ডিলারদের মাধ্যমেও বিক্রি করছে। আমাদের কাছে অ্যাক্টিভেশনের (সারাদেশে মোবাইল বিক্রির তথ্য) যে তথ্য আসছে তা দেখে বুঝতে পারছি, মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। আমাদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ডিলবাজার রেডি হচ্ছে। শিগগিরই আমরা নিজেরাই অনলাইনে মোবাইল বিক্রি শুরু করবো।’ তিনি জানান, এরইমধ্যে তাদের আমদানি করা মোবাইল দেশে এসে পৌঁছেছে। এসইবিএল নতুন এলসি (ঋণপত্র) খুলছে ঈদের আগেই, যাতে নতুন লটের মোবাইল এসে পৌঁছে। দেওয়ান কানন বলেন, ‘সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমরা একটা ‘ব্রিদিং স্পেস’ পাচ্ছি। আমরা মার্কেটের জন্য রেডি হচ্ছি। এটা যদি চলমান থাকে, তাহলে ঈদ উপলক্ষে আমরা যে টার্গেট করেছিলাম, তার অন্তত ৫০ শতাংশে পৌঁছাতে পারবো।’
ওয়ালটনের জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে নিজস্ব পেজ থেকে মোবাইল বিক্রি শুরু করবে। এরইমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি নতুন একটি মডেলের ফোন বাজারে ছাড়ছে। জানা গেছে, ওই মোবাইল দেশে করোনা সংকট শুরুর আগেই রেডি ছিল। এখন ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ মোবাইল সেটটি বাজারে ছাড়বে। তবে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।
দেশীয় আরেক মোবাইল ব্র্যান্ড সিম্ফনি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই কারখানা চালু করবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কারখানা চালু করে মোবাইল উৎপাদনে যাবে তারা। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, যে ডাটা তারা পাচ্ছে তাতে করে সিম্ফনি কর্তৃপক্ষ মনে করছে, কিছু কিছু মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন ই-কমার্স ও মার্কেট প্লেস প্ল্যাটফর্ম থেকেও মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। সূত্র-বাংলা বিট্রিউন