২০২৩ সালকে বিদায় করে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত পুরো বিশ্ব। ক্রিকেটে বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর ছিল ২০২৩। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর অনুষ্ঠিত হয় এই বছরে। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের হালচাল।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ
ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক সিরিজের পাশাপাশি জুনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় ফাইনাল। টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। আর ফাইনালে তাদের সঙ্গী হয় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের ওভালে অনুষ্ঠিত ফাইনালে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। প্রথমে ব্যাট করে ট্রাভিস হেড ও স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরিতে ৪৬৯ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে ২৯৬ রানে অলআউট হয় ভারত। ১৭৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অজিরা। জয়ের জন্য ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৪৪ রানের। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অজি বোলারদের তোপের মুখে ২৩৪ রানে অলআউট হয় ভারত। ২০৯ রানের বড় জয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে টানা দুই ফাইনাল হারের তেঁতো স্বাদ পায় ভারত।
অ্যাশেজ
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মর্যাদার অ্যাশেজ লড়াইয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজে দিয়ে অবসর ভেঙে টেস্টে ফেরেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। প্রথম ম্যাচে ২ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস এক জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৪৩ রানে হারায় অজিরা।
তবে তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে হারিয়ে লড়াইয়ে ফেরে ইংল্যান্ড। চতুর্থ ম্যাচ ড্র হয়। আর তাই পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ বাঁচা-মরার লড়াই হয়ে দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের জন্য। শেষ ম্যাচে ৪৯ রানের জয়ে ২-২ এ সমতায় থেকে অ্যাশেজ শেষ করে ইংল্যান্ড। সিরিজ সমতায় শেষ হলেও অ্যাশেজ নিজেদের দখলে অজিরা।
এশিয়া কাপ
সেপ্টেম্বরে মাঠে গড়ায় এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসর এশিয়া কাপ। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হাইব্রিড মডেলের এই আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। কলোম্বোয় অনুষ্ঠিত ফাইনালে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে বিশাল এক হারের লজ্জা উপহার দেয় ভারত। ফাইনালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে লঙ্কানরা।
ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজের বোলিং তোপে মাত্র ৫০ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। ৭ ওভার বল করে ২১ রান খরচায় ৬ উইকেট নেন সিরাজ। জবাবে মাত্র ৬ ওভার ১ বলেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ১০ উইকেটের বড় জয়ে এশিয়া কাপের অষ্টম শিরোপা নিজেদের করে নেয় রোহিত শর্মার দল।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ
এশিয়া কাপ শেষে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। বিশ্বকাপের এই আসর ছিল রেকর্ড ভাঙা গড়ার মিছিল। বিরল এক রেকর্ড দিয়ে শুরু হয় বিশ্বকাপ। আগের আসরের দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠে ভারত বিশ্বকাপের। কিউদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ১১ জন ব্যাটারই দেখা পায় দুই অঙ্কের রানের। যা ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম।
এরপর শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে হয় আরও এক রেকর্ড। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করে তিন ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪২৮ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। যা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড। এছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম একই দলের তিন ব্যাটার সেঞ্চুরির দেখা পান।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেন প্রোটিয়া ব্যাটার এইডেন মার্করাম। ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করে আয়ারল্যান্ডে কেভিন ও’ব্রেইনের রেকর্ড ভাঙেন মার্করাম।
তবে বিশ্বকাপেই মার্করামের সেই রেকর্ড ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪০ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের দখলে নেন ম্যাক্সওয়েল।
এই বিশ্বকাপে আরও এক রেকর্ড নিজের দখলে নেন ম্যাক্সওয়েল। এই আসরে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন এই অজি ব্যাটার।
এই বিশ্বকাপে ‘অদ্ভুত’ এক আউট দেখে ক্রিকেট বিশ্ব। যার সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হয় লঙ্কান ব্যাটার আঞ্জেলো ম্যাথুস। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনের ম্যাথুসকে আউট দেন আম্পায়ার।
এই বিশ্বকাপে টানা ৯ জয়ে ফাইনালে পা রাখে ভারত। এই বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে আলাদা করে চিনিয়েছেন দেশটির তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলি। স্বদেশী কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। টেন্ডুলকারের ৪৯ সেঞ্চুরিকে ছাড়িয়ে ৫০ সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন কোহলি।
ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের সঙ্গী হয় টানা দুই হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া। পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা ভারতকে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা নিজেদের করে নেয় অজিরা।
ফাইনালে টস হেরে ব্যাট করে ২৪০ রানে অলআউট হয় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের জয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
সূত্র: ইত্তেফাক