১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপাকে বাংলাদেশ। ৯.১ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ইনিংস পরাজয়ে শঙ্কিত টাইগাররা।
আসিথ ফার্নন্দো ও কাসুন রাজিথার গতির মুখে পড়ে একের পর এক সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক সৌরভ ও মাহমুদুল হাসান জয়। রান আউট হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
স্কোর বোর্ডে ১৫ রান জমা হতেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল। ১১ বল মোকাবেলা করে রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি দেশ সেরা এই ওপেনার।
অহেতুক রান আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত। আসিথা ফার্নান্দোর বল পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে ঝুঁকিতে রান নিতে গিয়ে বিপদে পড়েন তিনি। ১১ বলে মাত্র ২ রান করেই রান আউট হন নাজমুল হোসেন শান্ত।
শান্ত আউট হওয়ার পর সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। দুইবার লাইফ পেয়েও নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি এই তরুণ। আসিথা ফার্নান্দোর বাউন্সারে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
আবারও ব্যর্থ মুমিনুল হক সৌরভ। উইকেটে যেন টিকতেই পারছেন না তিনি। কাসুন রাজিথার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করেন মুমিনুল। ব্যাটের সামনে থেকে লাফিয়ে ওঠে বল জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। জোরালো আবেদন করেন শ্রীলংকান ফিল্ডাররা।
আম্পায়ার তাতে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন দিমুথ করুনারত্নে। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, মুমিনুলের ব্যাটে হালকা স্পর্শ করেছে বল। ২ বল খেলে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরলেন মুমিনুল। টেস্টে এ নিয়ে টানা ৭ ইনিংস দুই অঙ্কে যেতে পারলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
প্রথম ইনিংসের মতো আবারও চরম বিপর্যয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। চতুর্থ দিনের একিবারে শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৪ রানে। প্রথম ইনিসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও দুই সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস।
চট্টগ্রাম টেস্টে দাপটের সঙ্গে ড্র করলেও ঢাকা টেস্টে পরাজয়ের শঙ্কায় বাংলাদেশ দল। টাইগারদের করা ৩৬৫ রানের জবাবে ১৪১ রানের লিড নিয়ে ৫০৬ রানে প্রথম ইনিংস থামে শ্রীলংকার।
ঢাকা টেস্টে পরাজয় এড়াতে হলে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে (আনুমানিক) ২৭ ওভার এবং শুক্রবার পুরোদিন ব্যাট করতে হবে মুমিনুলদের। এর ব্যতিক্রম হলে পরাজয়ের ভয় রয়েছে স্বাগতিকদের। তবে বৃষ্টিতে যদি এক বা একাধিক সেশনের খেলা ভেসে যায় তাহলে হার এড়ানোর আরও একটু সুযোগ রয়েছে।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় স্বাগতিক বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের দায়িত্বশীলতায় শেষ পর্যন্ত ৩৬৫ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১৭৫* ও ১৪১ রান করে করেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক করুনারত্নের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৯৫ রান করে ফেরেন ওশাদা ফার্নান্দো (৫৭)। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের একেবারে শেষ মুহূর্তে আউট হন কুশাল মেন্ডিস। এরপর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নামা কাসুন রাজিথাকে সঙ্গে নিয়ে ২ উইকেট ১৪৩ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেন দিমুথ করুনারত্নে।
বুধবার তৃতীয় দিনের শুরুতেই দলকে সাফল্য এনে দেন এবাদত হোসেন। নাইটওয়াচম্যান কাসুন রাজিথাকে দিনের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়ে দেন এই পেসার। এরপর মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে সাকিবের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন লংকান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। সাজঘরে ফেরার আগে ১৫৫ বলে ৯টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৮০ রান করে ফেরেন তিনি।
লাঞ্চের ঠিক আগে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ভেসে যায় দ্বিতীয় সেশনের খেলা। বিকাল ৪টার শুরু হয় খেলা। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১০২ রানের জুটি গড়েন ম্যাথিউস। ফিফটি তুলে নেওয়া ধনঞ্জয়াকে ফেরান সাকিব।
চট্টগ্রাম টেস্টে পরপর দুই ইনিংসে ৬ ও ৩৩ রানে সাকিবের স্পিনে বিভ্রান্ত হওয়া ধনাঞ্জয়া ঢাকায় সাকিবের শিকার হওয়ার আগে করেন ৫৮ রান। বৃহস্পতিবার ৫৮ ও ১০ রান নিয়ে চতুর্থ দিনে ব্যাটিংয়ে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি তুলে নেন শ্রীলংকার সাবেক দুই অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল। ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাথিউস-চান্দিমাল ৪১৫ বল মোকাবেলা করে ১৯৯ রানের জুটি গড়েন।
পাঁচ উইকেটে ৪৬৫ রান করা শ্রীলংকা এরপর মাত্র ৪১ রানে হারায় ৫ উইকেট। ২১৯ বল মোকাবেলা করে ১১টি চার আর এক ছক্কায় ১২৪ রান করে এবাদতের শিকারে পরিণত হন দিনেশ চান্দিমাল। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিরশন ডিকভেলাকে দুই অঙ্কের ফিগার রান করতে দেননি সাকিব। ১১ বলে ১০ রানে এবাদতের শিকার হন রমেশ মেন্ডিস।
প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে নিজের পঞ্চম শিকারে পরিণত করেন সাকিব। আসিথা ফার্নান্দোকে সাকিব-মুশফিক রান আউটের ফাঁদে ফেললে ৫০৬ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১১৬.২ ওভার ৩৬৫/১০ রান (মুশফিক ১৭৫*, লিটন ১৪১; কাসুন রাজিথা ৫/৬৪, আসিথা ফার্নান্দো ৪/৯৩)।
শ্রীলংকা ১ম ইনিংস: ১৬৫.১ ওভার ৫০৬/১০ রান (অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ১৪৫*, দিনেশ চান্দিমাল ১২৪, দিমুথ করুনারত্নে ৮০, ওশাদা ফার্নান্দো ৫৭, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৮; সাকিব ৫/৯৬, এবাদত ৪/১৪৮)।