অক্টোবরে বিএনপি কী করবে বা কী করতে পারবে—এখন এই প্রশ্নেই আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের পরিণতি দেখতে চায় তারা। এমন চিন্তা থেকে যুগপৎ আন্দোলনকে অক্টোবরের মধ্যেই চূড়ান্ত ধাপে নিতে কৌশল ঠিক করছে দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ইতোমধ্যে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে সারা দেশে দলের নেতা–কর্মীদের।
কী হবে অক্টোবরে সে নিয়ে শঙ্কায় আছে মানুষ। সরকার এবার বিনা চ্যালেঞ্জে একতরফা নির্বাচনের দিকে যাতে এগোতে না পারে, সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব হবে বলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বড় অংশ মনে করছে। সাধারণ মানুষ ভাবছে এই যদি হয় পরিকল্পনা, তাহলে আবার সন্ত্রাস শুরু হতে পারে। বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। কীভাবে সাধারণ জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সবাই মনে রেখেছে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয় তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়। সে সময় ৪১৯টি ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় ৪৯২ জন, আহত হয় আড়াই হাজারের কাছাকাছি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের কথা কেউ ভোলেনি। তখন শত শতযানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে ভরে যায় ঢাকার আকাশ বাতাস। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি লাখ লাখ গাছও। নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারাদেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
এসব বাধা অতিক্রম করে সেদিন জনগণ গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিল। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তির দিনও বিএনপি জামায়াত চক্র আবার জ্বালাও-পোড়াও করে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, সরকারি স্থাপনাগুলোতে পেট্রোল বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। ওই সময় ২৩১ জনকে হত্যা করা হয়। প্রায় ১২শ লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়। ২ হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, আটটি যাত্রীবাহী লঞ্চ, সাতটি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসে আগুন দেয়।
জনগণের শঙ্কা সেই দিন আবারও ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনায় মত্ত এই দলটি। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল হক বলেন, দেশ এখন উন্নয়নের পথে এসেছে। আমরা গত দুই বছরে পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেখেছি। কোনো একটা রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এই ধারাবাহিকতা নষ্ট হোক তা আমরা চাই না।
উন্নয়নকর্মী রেজাউল করীম মনে করেন এখন জনগণ কোনো জ্বালাও পোড়াও সহ্য করবে না। তিনি বলেন, ‘কোভিডের পরে আমরা সবাই নানা সংকটে আছি। অর্থের যোগান নানা ভাবে কমেছে। এসবের মধ্যে সরকার সিদ্ধহস্তে সব সামলে নিতে চেষ্টা করছে। এখন কোনো ধরনের আভ্যন্তরীণ সংকট ঘটলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। বিএনপি অক্টোবরে আন্দোলনের ভয় দেখানোর কারণে অমাদের নানা সামাজিক কর্মসূচি আমরা স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছি। তবে আগের মতো জ্বালাও পোড়াও করে জনগণের সমর্থন আদায় করতে পারবে না এটা দলটিকে মেনে নিতে হবে।’
উল্লেখ্য, ঢাকায় বড় জমায়েতের মহাসমাবেশ করার পরদিনই গত ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের জমায়েত সেভাবে ছিল না। সেই পরিস্থিতি ছিল তাঁদের জন্য একটা বড় ধাক্কা। এরপর আগস্টে আবার দুই দফায় গণমিছিল–পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে ফিরেছে বিএনপি। এখন দলটি অক্টোবর মাসের মধ্যে তাদের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিতে চাইছে।